বাঙালির নিজস্ব ক্রিম থেকে বঙ্গজীবনের 'অঙ্গ', ৯০ পেরিয়েও তরতাজা বোরোলিন

বাংলার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে নস্টালজিয়া। তার কিছু হয়ত মুছে গেছে এখন, কিছু এখনও স্বমহিমায় রয়ে গেছে। সেখানে রয়ে গেছে একটা গাঢ় সবুজ রঙের টিউব। তার ভেতরেই রয়েছে সেই বস্তু, ‘সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম’। এইবার নিশ্চিত প্রত্যেকে ধরে ফেলেছেন এত পাদপুরাণ কার জন্য। হ্যাঁ, বোরোলিন। বাঙালির সর্বক্ষণের সঙ্গী এই ক্রিম। রেডিওয়ে শ্রাবন্তী মজুমদারের গলা থেকে আজকের পর্দায় বিদ্যা বালন, কিংবা ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা বিজ্ঞাপন – ‘বঙ্গজীবনের অঙ্গ’, সব মিলিয়েই বোরোলিনের জয়যাত্রা অব্যাহত।

কাটাছড়া, পোড়া, চামড়া ফাটা— সমস্ত কিছুর সমাধান বোরোলিন। এই রূপকথার শুরু হয়েছিল সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের বিক্ষুব্ধ সময় থেকে। সেই সময় ব্রিটিশদের ব্যবহৃত দ্রব্য বয়কট করার ডাক দিয়েছেন বিপ্লবীরা। জায়গায় জায়গায় তৈরি হচ্ছে দেশীয় শিল্প। সেই সময়ই, ১৯২৯ সালে গৌরমোহন দত্ত, জিডি ফার্মাসিউটিক্যালে তৈরি করেন ‘বোরোলিন’। সবুজ রঙের টিউবে গন্ধযুক্ত সাদা অ্যান্টিসেপটিক মলম। ডাক্তারি সামগ্রী হলেও, সাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় বোরোলিন। সেই থেকে বাংলার সংস্কৃতির একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়াল বোরোলিন। আজও থামেনি তা।

সামান্য একটা ক্রিমের ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষ পেয়েছিল লড়াইয়ের ছোঁয়া। ব্রিটিশদের সর্বগ্রাসী শিল্পনীতির মুখে সশব্দে একটা চপেটাঘাত মেরেছিল বোরোলিন। আর সেটাই সাহস দিয়েছিল সবাইকে। সাহেবদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, গৌরমোহন চেয়েছিলেন এমন একটা কিছু তৈরি করতে, যা হবে বাঙালির নিজস্ব। হাতিমার্কা ক্রিম বোরোলিনকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল ব্রিটিশও। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। বাঙালির জন্যেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে বিতরণও করা হয়েছিল তা। এমনই হাজার ইতিহাস জড়ানো এই একটা ক্রিমের সঙ্গে।

প্রথম থেকেই মধ্যবিত্তের আপন হয়ে উঠেছিল এই ক্রিম। ধীরে ধীরে আবেগ হয়ে উঠল। চামড়ার যেকোনো সমস্যায় এখনও ভরসার নাম বোরোলিন। চারিদিকে এত প্রলোভনের মাঝেও, সগর্বে টিকে আছে এটি। পেরিয়ে গেছে ৯০ বছর, অথচ এখনও তরুণ বাঙালির চিরকালের আপনজন এটি।

Powered by Froala Editor

More From Author See More