৯৫ বছর বয়সে ৩টি স্বর্ণপদক-জয়, রূপকথার কাহিনি হরিয়ানার 'দাদি'-র

বয়স ৯৫ বছর। যে-বয়সে অধিকাংশ মানুষই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন, হারিয়ে ফেলেন চলাফেরার ক্ষমতা, সেই বয়সে অ্যাথলেটিক্সের খাতায় নাম লেখানো অনেকটা স্বপ্নের মতোই। তবে এবার সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন হরিয়ানার ‘দাদি’ ভগবানী দেবী ডাগর। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্টে জিতলেন স্বর্ণপদক। 

গত ৪ এপ্রিল, পোল্যান্ডের তোরুন শহরে আয়োজিত হয়েছিল নবম মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতাতেই ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে হাজির হয়েছিলেন ভগবানী দেবী। অংশ নিয়েছিলেন একাধিক ইভেন্টে। যার মধ্যে ১০০ মিটারের দৌড়, শট পুট থ্রো এবং ডিস্কাস থ্রো-তে দেশকে সোনা এনে দিলেন তিনি। বিদেশের মাটিতে ওড়ালেন জাতীয় পতাকা। মজার বিষয় হল, ‘মাস্টার্স চ্যাম্পিয়নশিপ’ মূলত আয়োজিত হয় প্রবীণ অ্যাথলিটদের নিয়েই। তবে চলতি বছরের চ্যাম্পিয়নশিপে প্রবীণতম মুখ ছিলেন ভগবানী দেবী। 

অ্যাথলেটিক্সের দুনিয়ায় ভগবানী দেবীর এই উত্থানের কাহিনি রূপকথার থেকে কম নয় কোনো অংশেই। শুরু থেকেই বলা যাক গল্পটা। ১৯২৮ সাল। হরিয়ানার ছোট্ট গ্রাম খেরকায় জন্ম ভগবানীর। দরিদ্র কৃষক পরিবার। তার পর আবার কন্যা সন্তান। ফলে স্কুলে পা দেওয়া হয়নি কোনোদিনই। গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে অবসর সময় কাটত কাবাডি খেলে। তবে খুব বেশিদিন খেলাধুলো করারও সুযোগ আসেনি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তাঁকে বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। তারপর সংসার। সেখানেও ‘সুখ’ ছিল না তেমন। প্রসবের সময়ই প্রাণ হারিয়েছিল তাঁর দু-দুটি সন্তান। তৃতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আকস্মিকভাবে প্রয়াত হন স্বামী। 

সে-সময় পরিবার বলতে ছিল না কেউ-ই। একা হাতেই সামলাতে হয়েছে সংসার, বহন করতে হয়েছে উপার্জনের ভার। এমনকি সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্বও সযত্নে পালন করেছিলেন ‘নিরক্ষর’ ভগবানী। না, বৃথা যায়নি এই লড়াই। পরবর্তীতে পরীক্ষা দিয়ে দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে কেরানির চাকরি পেয়েছিল তাঁর পুত্রসন্তান। 

ততদিনে পঞ্চাশ পার হয়েছে ভগবানীর। ফলে, খেলাধুলার শখ থাকলেও, সেই বয়সে আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি তা। বদলে নাতি-নাতনিদের মানুষ করার দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। এসবের মধ্যে দিয়েই কখন যে বার্ধক্য কেটে গেছে, তা টেরই পাননি তিনি। তারপর নব্বই-এর কোঠায় এসে ফের অ্যাথলেটিক্সের ময়দানে নামা নাতি-নাতনিদের হাত ধরে। বড়ো নাতি বিকাশ দক্ষ শট-পুটার। রাজ্যস্তরে রয়েছে তাঁর একাধিক মেডেল। তিনিই হয়ে ওঠেন ভগবানী দেবীর কোচ এবং মেন্টর। 

গত বছর ৯৪ বছর বয়সে প্রথমবার পেশাদার অ্যাথলিট হিসাবে জাতীয় মার্স্টার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন ভগবানী। জিতেছিলেন দুটি স্বর্ণপদক। সেইসঙ্গেই জুটেছিল আন্তর্জাতিক মাস্টার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ছাড়পত্র। গতবছর ফিনল্যান্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা এবং শটপুট ও ডিস্কাস থ্রো-তে ব্রোঞ্জ পদক এনেছিলেন তিনি। চলতি বছরে এই তিনটি প্রতিযোগিতাতেই জিতলেন সোনা। বয়স যেন নিতান্তই সংখ্যামাত্র তাঁর কাছে। মজার বিষয় হল, এখানেই থেমে থাকতে চান না ভগবানী। বরং, আগামীতেও দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। দেশে ফিরেই ফের অনুশীলন নামবেন তিনি, ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন হরিয়ানার ‘তরুণী’। 

Powered by Froala Editor