৯০ বছর বয়সে জুডোয় বেল্ট অর্জন, নজির বৃদ্ধের

ক্যারাটে এবং কুংফুর পরেই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মার্শাল আর্টের তালিকায় রয়েছে জুডো। এমনকি অলিম্পিকেও প্রতিবছর আয়োজিত হয় জুডো প্রতিযোগিতা। শুধু জনপ্রিয়ই নয়, এই মার্শাল আর্টকে আয়ত্তে আনাও যথেষ্ট কঠিন। তবে এবার ৯০ বছর বয়সে জুডোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেল্ট জিতে এক আশ্চর্য নজির তৈরি করলেন ব্রিটেনের নবতিপর জুডোকা।

মাইকেল লেই (Michael Leigh)। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রবীণতম জুডোকা তিনিই। এমনকি সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে এই বিশেষ বেল্ট রয়েছে যুক্তরাজ্যের মাত্র ৬ জন জুডোকার ঝুলিতে। তাছাড়াও ৯০ বছর বয়সে জুডোর জুডো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেল্ট-জয়ের উদাহরণ গোটা বিশ্বে আর নেই বললেই চলে। 

১৯৫৫ সাল। রয়্যাল এয়ারফোর্স কাজ করার সময় প্রথমবার জুডোকে আবিষ্কার করেন মাইকেল। নেপথ্যে লন্ডন জুডো সোসাইটির সহ-প্রতিষ্ঠাতার লেখা একটি বই। এই গ্রন্থ পড়েই জুডোর সম্পর্কে বিশেষভাবে আকর্ষিত হয়ে পড়েন মাইকেল। এমনকি ভর্তি হয়ে যান লন্ডনের জুডো সোসাইটিতে। দীর্ঘ এক দশক সেখানে অনুশীলন করার পর জাতীয় স্তরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন মাইকেল। এমনকি ১৯৬৪-র অলিম্পিকে যুক্তরাজ্যের দলে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসাবে জায়গাও পেয়েছিলেন তিনি। তবে অলিম্পিকের মঞ্চে তাঁর খেলা ওঠা হয়নি কোনোদিনই। 

অবশ্য এত কিছুর পরও জুডোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি তাঁর। ১৯৭৬ সালে পশ্চিম সাসেক্সের ক্রাউলিতে ‘কিন রিউ’ জুডো ক্লাব স্থাপন করেন মাইকেল। দু’মেয়াদে যুক্তরাজ্যের জাতীয় জুডো ফেডারেশনের চেয়ারম্যানও হন তিনি। তাছাড়া জাতীয় কোচ এবং আন্তর্জাতিক জুডো রেফারির ভূমিকাতেও দেখা গেছে তাঁকে। 

নব্বই-এর দশকের শেষ দিকে মাইকেলের তৈরি জুডো স্কুলই হয়ে উঠেছিল যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড়ো জুডো শিক্ষাকেন্দ্র। তিনটি শাখা মিলিয়ে ৫২০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিত তাঁর স্কুলে। এই স্কুলের সূত্রেই বিশ্বের ১৬০টি দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া ছাড়াও, কখনও কখনও নিজেও তিনি নেমে পড়তেন জুডো রিং-এ। কিন্তু অলিম্পিকের দলে সুযোগ পাওয়া, তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কিংবা আন্তর্জাতিক জুডোর ম্যাচে রেফারিং করানোর পরেও কেন সর্বোচ্চ তকমা অধরা থেকে গিয়েছিল তাঁর এতদিন? 

আসলে ক্যারাটের মতোই জুডোর ক্ষেত্রেও সবমিলিয়ে রয়েছে ১০টি স্তর রয়েছে। যা জুডোকাদের ভাষায় পরিচিত ‘ড্যান’ নামে। অলিম্পিকের মঞ্চ কিংবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যে-সকল জুডোকাদের দেখে অভ্যস্ত আমরা, তাঁরা সকলেই যে-সর্বোচ্চ স্তরের বেল্ট পেয়েছেন— এমনটা নয়। বরং এই খেতাবের জন্য প্রয়োজন পড়ে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার। অবশ্য শেষ বয়সে এসে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূর্ণ হলেও, শারীরিক সক্ষমতা বা দক্ষতাকে কজনই-বা ধরে রাখতে পারেন? মাইকেলের কৃতিত্ব সেখানেই। 

সম্প্রতি বয়স্ক জুডোদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে আয়োজিত হয়েছিল একটি বিশেষ প্রতিযোগিতা। সেখানে প্রবীণতম প্রতিযোগী হিসাবেই অংশ নিয়েছিলেন মাইকেল লেই। বাকিদের ধরাশায়ী করে জিতে নেন চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব। এই জয়ের পরই নবম বেল্ট বা ‘নাইন্থ ড্যান’-এ উত্তীর্ণ হন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্তর হলেও, এই খেতাব-জয় যে-কোনো জুডোকার কাছেই যথেষ্ট ঈর্ষণীয় ব্যাপার। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না মাইকেল। বরং, এই জয় যেন নতুন করে উদ্যম যোগাচ্ছে তাঁকে। লক্ষ্য একটাই, জুডোর শীর্ষস্তরে পৌঁছানো, ‘নির্বাণ’-লাভ… 

Powered by Froala Editor