প্রতি বছর ১০০০ কিলোমিটার ট্রেক! অশীতিপর স্কটিশ মহিলার কীর্তি

/৯

বয়স ৮০ বছর। কিন্তু তাতে কী? বয়স তো কেবল একটা সংখ্যামাত্র। তাই এই বয়সেও নিজের ঘোড়া এবং পোষ্য কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবছর ট্রেকিং-এ বেরিয়ে পড়েন স্কটল্যান্ডের জেন ডচিন (Jane Dotchin)। বিগত ৪০ বছর ধরে এভাবেই ট্রেকিং করে আসছেন তিনি।

/৯

যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। নতুন কেনা ঘোড়াকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই ডাচিনের ইচ্ছা হয়, তিনি এখন আর বাড়ি ফিরবেন না। একটু একটু করে সময় এগিয়ে যায়। রাত হলে কোনো গ্রামে আশ্রয় নেন। আবার পরেরদিন বেরিয়ে পড়েন নতুন ঠিকানার উদ্দেশে। এভাবেই সেবছর ৯৬৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে এসেছিলেন ডাচিন।

/৯

সেই থেকে প্রতি বছর ৩১ আগস্ট তারিখটা এলেই মন পালাই পালাই করে তাঁর। সপ্তাহখানেক এদিক ওদিক ঘুরে আবার ফিরেও আসেন। সঙ্গে ঘোড়াটি তো থাকেই। আর থাকে একটি জ্যাক রাসেল টেরিওর কুকুর। যার নাম ডিঙ্কি।

/৯

ডিঙ্কির সামনের দিকের পা দুটি অসুস্থ। কোনোরকমে হাঁটতে পারে, তবে দৌড়তে পারে না একেবারেই। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি পোষ্য কুকুর আছে ডাচিনের। কিন্তু বাকিদের তাঁর মা দেখাশোনা করলেও ডিঙ্কির দিকে নজর দিতে চান না। তাই প্রিয় পোষ্যটিকে প্রতিবছর নিজের সঙ্গেই নিয়ে যান ডাচিন।

/৯

দুই বন্ধু ছাড়া সম্বল বলতে থাকে সামান্যই। রাস্তায় কুয়াশার মধ্যেও যাতে গাড়িচালকরা তাঁকে দেখতে পান, তাই সবসময় একটি কমলা রঙের ফ্লুরসেন্ট জ্যাকেট পরে থাকেন তিনি। এছাড়া থাকে একটু তাঁবু। সবসময় তো রাতের আশ্রয়ের জন্য গ্রাম পাওয়া যায় না। আর একটি মোবাইলফোন সঙ্গে রাখেন তিনি। তবে সেটি বেশিরভাগ সময়ে বন্ধই থাকে।

/৯

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ভাঙছে ডাচিনেরও। ইতিমধ্যে একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি আবছা হয়ে গিয়েছে। কুয়াশার সময় রাস্তাঘাট কিছুই দেখতে পান না তিনি। কিন্তু তাতে কী? স্কটল্যান্ডের রাস্তাঘাট যে তাঁর সমস্তই চেনা। আর তার চেয়েও বেশি চেনা তাঁর ঘোড়াটি। এই বন্ধুর উপর ভরসা রেখেই কাটিয়ে দিতে পারেন সম্পূর্ণ যাত্রাপথ।

/৯

প্রতিবছরই প্রায় চেনা যাত্রাপথ। দু-তিনটি গন্তব্যেই রওয়ানা দেন ডাচিন। তার সবচেয়ে বড়ো কারণ যাত্রাপথের চেনা মানুষগুলো। প্রতি বছর তাঁদের সঙ্গে দেখা না হলে মন ভালো থাকে না ডাচিনের। এক একটি গ্রামে পৌঁছানোর আগে সেখানে পরিচিত মানুষদের ফোন করে জানিয়ে দেন, তিনি আসছেন। আর তাঁরাও প্রতি বছর আতিথেয়তায় ভরিয়ে দেন ডাচিনকে।

/৯

ডাচিনের এই অদ্ভুত নেশা বহু মানুষকে অবাক করেছে। ইতিমধ্যে ব্রিটিশ হর্স স্যোসাইটি থেকে এক্সেপশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। তাছাড়া প্রায় প্রতিবছর ভ্রমণের শেষে একটি করে বই লেখেন তিনি। সেইসব বইয়ের বিক্রিও হয় প্রচুর। তবে ডাচিনের কথায়, তিনি বিখ্যাত হওয়ার জন্য বই লেখেন না। বরং তাঁর এই অ্যাডভেঞ্চারের কথা শুনে বাকিদের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভবঘুরে মানুষটাও বেরিয়ে আসুক, এমনটাই চান তিনি।

/৯

প্রতি বছরের মতো এবছরও ৩১ আগস্ট বেরিয়ে পড়েছিলেন ডাচিন। ৯ সেপ্টেম্বর আবার ফিরে এসেছেন বাড়িতে। তারপরেই আবার বসে পড়েছেন বই লিখতে। ৪০ বছর তো হল, আর কতদিন এভাবে বেরিয়ে পড়বেন তিনি? প্রশ্ন করলে কেবল হাসেন ডাচিন। এই প্রশ্নের উত্তর তিনি জানেন না। সম্ভব হলে জীবনের শেষ বছর পর্যন্ত এভাবেই বেরিয়ে পড়বেন প্রতি বছর।

Powered by Froala Editor

More From Author See More