বন্ধ্যা জমিতে জীবনদান, ৩৫০০ গাছ লাগিয়েছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ

ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের দেশ। অথচ তার মধ্যেও পরিত্যক্ত বন্ধ্যা জমির পরিমাণ কম নয়। দেশের সমস্ত প্রান্তেই কমবেশি এমন এলাকা দেখা যায়। মানুষ থেকে বন্যপ্রাণী, কেউই সেখানে বাস করতে পারে না। এমনকি উদ্ভিদের বেঁচে থাকার মতো পরিবেশও নেই সেখানে। অথচ একটু উদ্যোগ নিলেই সেইসব এলাকার চেহারা বদলে যেতে পারে। প্রয়োজন শুধু একটু পরিকল্পনা আর নিষ্ঠা। বিগত ১৪ বছর ধরে সেই উদাহরণই তৈরি করেছেন চেন্নাইয়ের এই বৃদ্ধ।


ডিভি শ্রীধরন ছিলেন পেশায় একজন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ। কিন্তু কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তাঁর উদ্দীপনার কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। সমুদ্রের জীবনই যে ক্লান্তিহীন। শ্রীধরন তখন ভাবলেন এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা, যা দেশের চেহারা বদলে দেবে।  স্বপ্ন ছিল অনেক বড়, কিন্তু সামর্থ্য সামান্যই। সেই সামান্য সামর্থ্যে ভর করেই কাজ শুরু করলেন। চেন্নাই শহরের কাছে ১৭ একর বন্ধ্যা জমি কিনে ফেললেন। তারপর শুরু হল বৃক্ষ রোপণের কাজ। 


এই জমিতে এখনও পর্যন্ত ৩৫০০টি বৃক্ষ রোপণ করেছেন তিনি। প্রথম তিন বছর তাদের যথেষ্ট পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হত। তবে এখন তারা জল, খাবার সমস্তকিছু নিজেরাই সংগ্রহ করে নিতে পারে। এমনকি বড় গাছেদের ঘিরে জন্মেছে অসংখ্য লতা-গুল্ম। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এসে ভিড় করে এই নতুন বনভূমিতে। একবার সেখানে গিয়ে দাঁড়ালে সমস্ত শরীর এবং মন ঠান্ডা হয়ে যায়।


শ্রীধরনের বয়স এখন ৮০ বছর। কিন্তু এখনও কাজে ক্লান্তি নেই। লক্ষ্য ছিল সমস্ত দেশের চেহারা বদলে দেওয়ার। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি ঠিকই, কিন্তু যা তিনি করেছেন সেটা একাই করেছেন। সরকার বা কোনো এনজিও, কারোর কাছেই সাহায্য প্রত্যাশা করেননি। কিন্তু তিনি নিজে তৈরি করেছেন 'পয়েন্ট-রিটার্ন' নামে একটি সংস্থা। দেশের নানা প্রান্তে বন্ধ্যা জমি পুনরুদ্ধারের কাজে সাহায্য করতে চান তিনি। 


এখন তাঁর একটাই আক্ষেপ, তাঁর অবর্তমানে এই জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন কেউই। কয়েকজন ব্যক্তি প্রথমে আগ্রহ দেখালেও বছর চারেক থাকার পরেই চলে গেছেন সবাই। এদিকে তাঁর নিজের আয়ুও শেষ হয়ে আসছে। তবে আশার কথা, তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে চেন্নাইয়ের একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান এবং একটি অবৈতনিক ছাত্রাবাস। তাঁর জমির ৪ একর তিনি দান করেছেন বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরির জন্য এবং ৫ একর দান করেছেন ছাত্রাবাসের জন্য খাদ্য শস্যের উৎপাদনে। এই দুই সংস্থাই নিজেদের জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। এখন বাকি ৮ একর জমির বন্দোবস্ত করতে পারলেই তিনি খুশি। জীবনের অন্তিম সময়ে এসে তাঁর এটুকুই চাহিদা।

Powered by Froala Editor