৫০০০ বছরের পুরনো সরাইখানা, কোথায়?

বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম মেসোপটেমিয়া। আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগে অধুনা ইরাকের বুকে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা ছিল, তৎকালীন সময়ের অন্যতম বিকশিত মানব সভ্যতা। এবার সেই সভ্যতারই এক প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কৃত হল ইরাকের (Iraq) আল-হিবা শহরে। সন্ধান মিলল একটি প্রাচীন সরাইখানার (Tavern)। আজকের ভাষায় বলতে গেলে রেস্তোরাঁ। যার বয়স প্রায় ৫ হাজার বছর!

হ্যাঁ, পাঁচ হাজার বছর আগের রেস্তোরাঁ। আনুমানিক ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই সরাইখানা নির্মিত হয়েছিল বলেই দাবি ইরাকের গবেষকদের। অন্তত কার্বন ডেটিং জানাচ্ছে তেমনটাই। আর এই আশ্চর্য আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পিজা বিশ্ববিদ্যালয়, লাগাশ আর্কিওলজিক্যাল প্রোজেক্ট, পেন মিউজিয়াম এবং হেরিটেজ ইন বাগদাদের গবেষকরা। তাঁদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ইরাকে আবিষ্কৃত প্রত্নক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম এই বিশেষ সাইটটি। প্রশ্ন থেকে যায়, এই আবিষ্কার এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কেন তাঁরা? 

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে ইরাকের মানচিত্রে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মূল কেন্দ্রের দক্ষিণে কয়েকশো মাইল দূরে অবস্থিত আল-হিবা শহর। এই শহরেও যে মেসোপটেমিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুকিয়ে থাকতে পারে, সেই সম্ভাবনা বহুদিনই উপেক্ষা করে এসেছেন গবেষকরা। ধরে নেওয়া হত এই শহর তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর আগে। গত দশকে আল-হিবায় নির্মাণ কাজের জন্য খননের সময়ই আবিষ্কৃত হয় বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। আর তারপরই শুরু হয়েছিল গবেষণা। স্থানীয় গবেষকরা তো বটেই, সেই সঙ্গে মেসোপটেমিয়ার হারানো ইতিহাস অনুসন্ধানে মাঠে নামেন বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও। আর তাতেই উঠে আসতে থাকে আল-হিবার একের পর এক বর্ণময় অধ্যায়। আর সাম্প্রতিক আবিষ্কারের নেপথ্যে আরও খানিকটা পিছিয়ে গেল আল-হিবার ইতিহাস। 

সংশ্লিষ্ট প্রত্নক্ষেত্রে একটি প্রকাণ্ড চুল্লি, মাটির পাত্র, রান্নার সামগ্রী, প্রাচীন খাবারের অবশিষ্টাংশ এবং বাষ্পনিয়ন্ত্রিত রেফ্রিজারেটারের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে রেফ্রিজারেটরের ব্যবহার জানত মেসোপটেমিয়ানরা। ঠিক যেভাবে মাটির কলসিতে ঠান্ডা থাকে জল, সেভাবেই খাবার ও পানীয় ঠান্ডা রাখার জন্য মাটির রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করা হত এই প্রাচীন সরাইখানায়। আর খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করা হত খোলা আকাশের নিচে। সেখানে বেশকিছু বেঞ্চের ধ্বংসাবশেষও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সবমিলিয়ে আল-হিবায় সে-সময়ও জনপদ ছিল, তার প্রমাণ দেয় এই আবিষ্কার। আর এই শহরে নিত্য যাওয়া আসা লেগে থাকত বহু মানুষের। পাশাপাশি এই আবিষ্কার এও প্রমাণ করে, তৎকালীন সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল বেশ উন্নত। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল, এই আশ্চর্য ইতিহাসের অধ্যায়, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুকিয়ে ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১৯ ইঞ্চি নিচেই। যা অবাক করেছে খোদ গবেষকদেরও। 

তবে এখানেই শেষ নয়। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে এইধরনের আরও ঐতিহাসিক নিদর্শন লুকিয়ে থাকতে পারে বলেই মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ইঙ্গিত দিচ্ছেন, আগামীতেও অনুসন্ধান চলবে পুরোদমে…  

Powered by Froala Editor