স্ট্যান্ড-আপ কমেডি লেখা হয়েছিল পঞ্চদশ শতকেও!

স্ট্যান্ড-আপ কমেডি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই আশ্চর্য পেশার সঙ্গে অল্প-বিস্তর পরিচিত সকলেই। কলকাতায় ততটা জনপ্রিয় না-হলেও, দিল্লি-মুম্বাই-বেঙ্গালুরুর মতো শহরে নিয়মিতই নানান জায়গায় আয়োজিত হয় স্ট্যান্ড-আপ কমেডির লাইভ অনুষ্ঠান। হিসেব বলছে, বলিউডে আধুনিক স্ট্যান্ড-আপের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, জনি লিভারের হাত ধরে। তার আগে বাংলার বুকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাস্য-কৌতুকের অনুষ্ঠান করেছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, সুশীল চক্রবর্তী প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা। এমনকি তা-নিয়ে পুজোর সময় প্রকাশিত হত কৌতুকের একক অ্যালবামও। কিন্তু গোটা পৃথিবীর মানচিত্র দেখতে গেলে, কোথায় এবং কবে জন্ম এই স্ট্যান্ড-আপের (Stand-Up Comedy)? 

সম্প্রতি উত্তর মিলল এই প্রশ্নের। বছর খানেক আগের কথা। স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ ও নথি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন কেমব্রিজের ইংরেজি অনুষদের গবেষক ডঃ জেমস ওয়েড। সম্প্রতি স্কটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত একটি প্রাচীন পার্চমেন্টের নথি উদ্ধার করেন তিনি। নথি না বলে তাকে পুস্তিকা বলাই ভালো। আর এই পুস্তিকাই নাকি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত বিশ্বের প্রাচীনতম স্ট্যান্ড-আপ কমেডির নিদর্শন। 

রিচার্ড হিজ। ব্রিটেনের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের এই গৃহশিক্ষক এবং চারণ কবির লেখা এই বিশেষ ডায়েরি থুড়ি পুস্তিকাটি। কার্বন-ডেটিং অনুযায়ী, পার্চমেন্ট কাগজের এই নথিটির বয়স প্রায় ৫০০ বছর। পাশাপাশি এই পুস্তিকার মধ্যেও উল্লেখিত হয়েছে একাধিক তারিখের কথা। সেখান থেকে স্পষ্টতই ধারণা পাওয়া যায়, সেটি লেখা হয়েছিল ১৪৭৯-৮০ সালের মধ্যে। কিন্তু হিজের লেখা এই ডায়েরিকেই কেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডির নিদর্শন হিসাবে ধরে নিচ্ছেন গবেষকরা? কী বিষয়েই বা লিখেছিলেন তিনি? 

মধ্যযুগীয় ব্রিটেনে শিল্পী স্বাধীনতা, সামাজিক জীবন, নাইটলাইফ, রাজনীতি, সামরিক সংঘাত— সবকিছুই কোনো-না-কোনো ভাবে ধরা পড়েছে হিজের কলমে। পাশাপাশি বিভিন্ন পৌরাণিক ঘটনা এবং ইশপের গল্পকেও কৌতুকে মুড়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট অঞ্চল, অর্থাৎ ডার্বিশায়ার, নটিংহামশায়ারেরও বহু আঞ্চলিক কথন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে মজা, ঠাট্টার কথাও লিখে রেখেছেন তিনি। 

অবশ্য এই সবকিছুই যে গদ্যে লিখেছিলেন হিজ, এমনটা নয়। কখনো তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন মুক্তগদ্যের, কখনও ছন্দময় ছড়ার। আবার কখনও শুধু পয়েন্ট করে করেই লিখে রেখেছিলেন কিছু কিছু বিষয়বস্তু। যেন অনুষ্ঠান করার সময় এই বিষয়গুলির দেখেই সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত দর্শকের সামনে নতুন কোনো কৌতুক বানিয়ে হাজির করবেন তিনি। 

হ্যাঁ, আজ থেকে পাঁচশো বছর আগেও তথাকথিত ‘লাইভ’ অনুষ্ঠান করতেন ব্রিটেনের এই চারণ কবি। অন্তত তাঁর ডায়েরি বলছে সে-কথাই। স্কটল্যান্ডের একাধিক সম্ভ্রান্ত পরিবারের নৈশভোজের অনুষ্ঠানে কৌতুক উপস্থাপনার জন্যই এই রচনাগুলি লিপিবদ্ধ করেছিলেন হেজ। আর সেই কারণেই বিশ্বের প্রাচীনতম স্ট্যান্ড-আপ কমেডি হিসাবে তাঁর এই লেখাকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন আজকের গবেষকরা। 

তবে এই প্রতিবেদন শেষের আগে, আরও এক মজাদার তথ্যের কথা উল্লেখ করে রাখার প্রয়োজন আছে বইকি। পরিচিত কোনো বিষয়কে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কৌতুকের মাধ্যমে উপস্থাপন করাই যদি স্ট্যান্ড-আপ হয়, তবে সে-ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ভারতও। আজ থেকে ৩০০ বছর আগে কেরলেও অনুষ্ঠিত হত এক বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠান। ‘চাকিয়ার কুঠু’-খ্যাত এই অনুষ্ঠানে মূলত রামায়ণ ও মহাভারতকে কেন্দ্র করেই উপস্থাপন করা হত বিভিন্ন কৌতুক। পুরাণের গল্পগুলিকেও কখনও কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে বদলে ফেলা হত স্রেফ মজার জন্যই। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, বৈদেশিক প্রভাবের বহু আগেই পথচলা শুরু ভারতের স্ট্যান্ড-আপ কমেডি…

Powered by Froala Editor