বিদেশের সঙ্গে যোগ নেই, করোনায় আক্রান্ত দমদমের বৃদ্ধ – কী অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে?

প্রতিটা পদক্ষেপে ভয়। বিদেশ থেকে আসা মানুষ দেখলেই সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে সবাই। কোত্থেকে ছড়িয়ে পড়বে করোনা ভাইরাস, কিছুই বলা যায় না। ভারতের চিকিৎসা গবেষণা পর্ষদ অবশ্য জানাচ্ছে, এখনই এদেশের জনজাতির মধ্যে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েনি। অতএব বিদেশ ঘুরে আসা মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেই সুরক্ষিত থাকা যাবে। কিন্তু এই আশ্বাসও কি খুব একটা বিশ্বাস দিতে পারছে? এর মধ্যে পুনের এক মহিলার ঘটনা সেই প্রশ্নকেই উস্কে দিয়ে যাচ্ছে। মহামারির কবল থেকে আদৌ কতটা সুরক্ষিত আমাদের দেশ?

আরও পড়ুন
বিনামূল্যে রেশন, ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা – করোনা-রোধে সদর্থক ভূমিকা প্রশাসনের

দেশে করোনার কোপে মৃতের সংখ্যা এখনও অবধি ৪। আর আক্রান্তের সংখ্যা ২৯৯। অবশ্য এঁরা প্রত্যেকেই হয় বিদেশ থেকে সংক্রমণ নিয়ে এসেছেন, অথবা কোনো আক্রান্ত বিদেশির সংস্পর্শে এসেছেন। কিন্তু আজ সন্ধায় একটি খবর চমকে দিয়েছে সকলকে। পশ্চিমবঙ্গের দমদমের এক বৃদ্ধও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। বিদেশের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগই নেই তাঁর। পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিদেশে কোথাও যাননি তিনি, বাড়ি থেকেও খুব একটা বেশি বেরোতেন না। হাসপাতালেই ভর্তি আছেন সাতদিন ধরে। অবস্থা সঙ্কটজনক, আপাতত ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন
বন্ধ রেস্টুরেন্ট-বার-মিউজিয়াম-চিড়িয়াখানা, জমায়েত এড়াতে সিদ্ধান্ত রাজ্য প্রশাসনের

কিছুদিন আগে, পুনে শহরের ৪১ বছরের এক মহিলার শরীরেও পাওয়া যায় করোনা ভাইরাস। তিনি এর মধ্যে কোনোদিন বিদেশে তো যাননি, এমনকি কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন বলেও জানা যায়নি। তবে এন. আই. ভি.'র রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বেশ আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই আছেন এখন। ১৬ মার্চ ভারতী হসপিটালের আই. সি. ইউ. বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তিনি। উপসর্গ বলতে গলায় প্রচণ্ড ব্যাথা। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন এই সংক্রমণ আসলে সোয়াইন ফ্লু। তবে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করতেই দেখা যায়, এইচ১এন১ নয়, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে করোনা ভাইরাস।

আরও পড়ুন
পিছিয়ে গেল উচ্চমাধ্যমিক, জেনে নিন নতুন সূচি

কিছুদিন আগেই প্রায় অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতেও। বছর কুড়ির এক যুবতীর শরীরে পাওয়া গিয়েছে করোনা ভাইরাস। তাঁরও বিদেশ যাওয়া বা কোনো বিদেশির সংস্পর্শে আসার কোনো রেকর্ড নেই। তবে এখনই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কথাকে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না মেডিক্যাল বোর্ড। তাঁরা মনে করছেন, অবশ্যই কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, শুধু সেই সংক্রান্ত সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, জানা গিয়েছে গত ৩ মার্চ নয়া মুম্বইতে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন পুনের ওই মহিলা। সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে অনুমান করছেন চিকিৎসকদের অনেকে।

আরও পড়ুন
মহামারীতে ছারখার বাংলা, মৃত ৫০ হাজারেরও বেশি, বাদ গেল না সাহেবরাও

আপাতত আক্রান্ত মহিলাকে আই. সি. ইউ.তেই রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তারা। আর আই. সি. এম. আর.এর নির্দেশ মতো এইচ. আই. ভি. সংক্রমণের চিকিৎসাই করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও জানা যায়নি। ফলে চিকিৎসায় কতদূর উপকার হবে, সেকথা এখনই বলা যাচ্ছে না। আর এর মধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে দেশজুড়ে রীতিমতো বিপদ সংকেত বাজতে চলেছে। বলা হয় একটি মহামারীর তৃতীয় স্তরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঘটনা ঘটে। আর তার পরের স্তরে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ-পরিস্থিতি। অতএব স্বাস্থ্য দপ্তর উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি বিচার করছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও।