৩২০০ বছরের পুরনো সভ্যতার হদিশ তামিলনাড়ুতে, ভারতীয় ইতিহাসের সূচনা দক্ষিণেই?

বিগত এক বছরে দক্ষিণ ভারতের ভূখণ্ড থেকে মিলেছে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কেরল, তামিলনাড়ু-সহ একাধিক রাজ্যেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন সভ্যতার (Ancient Civilization) প্রমাণ। কিন্তু কতটা প্রাচীন সেই সভ্যতা? সম্প্রতি উত্তর পাওয়া গেল সেই প্রশ্নের। আনুমানিক ৩২০০ বছর! হ্যাঁ, চমকে ওঠার মতোই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে করা কার্বন ডেটিং (Carbon Dating) জানাল এমনটাই।

তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) থুথুকুড়ি জেলায় অবস্থিত শিবকালাই অঞ্চলে বছর খানেক আগেই খননকার্যের সময় মিলেছিল এই সভ্যতার হদিশ। পাওয়া গিয়েছিল বেশ কিছু মাটির পাত্র এবং কলসিতে সংরক্ষিত দানাশস্য। ধানের সেই নমুনাই পাঠানো হয়েছিল আমেরিকার মায়ামির একটি অ্যানালিটিক টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে। সেখানেই কার্বন ডেটিং জানায়, দানাশস্যগুলি সংরক্ষণ করা হয়েছিল আনুমানিক ১১৫৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। থামিরাবরণী (তাম্রবর্ণী) নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার (Thamirabarani Civilization) নামকরণ করা হয়েছে নদীর নামেই।

এর আগে অবশ্য তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গাই জেলাতেও হদিশ মিলেছিল প্রাচীন সভ্যতার। মনে করা হয়, তা গড়ে উঠেছিল আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। তার থেকেও প্রায় অন্ততপক্ষে ৬০০ বছর পুরনো থামিরাবরণীর জনপদ।

তবে শুধু থামিরাবরণীই নয়, তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন জেলায় সন্ধান মিলেছে দুটি প্রাচীন বন্দরেরও। যেগুলি নির্মিত হয়েছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে নবম শতকে। গবেষকদের অনুমান এই বন্দরের মাধ্যমেই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য চলত ভারতের এই প্রাচীন সভ্যতার। ফলে দক্ষিণ ভারতে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার মান যে যথেষ্ট উন্নত ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো। 

আরও পড়ুন
সিন্ধু সভ্যতায় দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা-ব্যবহার, হদিশ দিলেন বাঙালি গবেষক

আকর্ষণীয় বিষয় হল, দক্ষিণ ভারতের এই সভ্যতায় খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন শিল্পকলা এবং দেওয়ালচিত্রের সঙ্গে প্রায় ৮০ শতাংশ মিল রয়েছে সিন্ধু সভ্যতার। এই সাদৃশ্য উস্কে দিচ্ছে আরও একটি সম্ভাবনা। দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর ভাষাগত যোগাযোগ ছিল বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকদের একাংশ। এমনকি সিন্ধুর সভ্যতারও আগে দক্ষিণ ভারতে জনপদ গড়ে ওঠার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না একেবারেই। থামিরাবরণী সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যদের সামনে রেখে, তেমনটাই দাবি করছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্তালিন। তামিলনাড়ু, কেরল-সহ গোটা দক্ষিণ ভারতজুড়ে বিস্তারিত গবেষণার এবং প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের জন্যও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই দাবি সত্যি হলে নতুন করে লিখিত হবে ভারতের ইতিহাস, তা বলার অপেক্ষা থাকে না…

আরও পড়ুন
যুদ্ধ, মহামারী, অভিবাসনে অশান্ত গোটা বিশ্ব; ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে মানব সভ্যতা?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শিল্পকে হাতিয়ার করেই সভ্যতার সঙ্গে লড়াই ব্রাজিলের বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীর