তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে অবসাদের প্রবণতা, জানাচ্ছে ইউনিসেফের সমীক্ষা

প্রতি ৫ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজন করে মানসিক অবসাদের (Mental Depression) শিকার। সম্প্রতি এমনই তথ্য উঠে এল জাতিপুঞ্জের সমীক্ষায়। মঙ্গলবার এমনই এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। সারা পৃথিবীর মধ্যে থেকে ২১টি দেশের তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে দীর্ঘ সমীক্ষার পর প্রকাশিত হয়েছে এই রিপোর্ট। আর তাতে দেখা গিয়েছে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে অবসাদের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

গত ৬ মাস ধরে নানা তরুণ-তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছেন সমীক্ষকরা। আর তাদের বক্তব্যের নিরিখেই তৈরি করা হয়েছে এই রিপোর্ট। ইউনিসেফের সঙ্গে এই কাজে সাহায্য করেছে দ্য চিলড্রেন’স এজেন্সি এবং গ্যালাপ নামের দুটি সংগঠনও। তবে এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যকেই একমাত্র গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো চিকিৎসক তাদের মানসিক অবসাদের বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেননি। এই প্রসঙ্গে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, “অনেক ক্ষেত্রেই ‘অবসাদ’ শব্দটিকে একটি আম্ব্রেলা টার্ম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, মানসিকভাবে সুস্থ বোধ না করা মানেই সেটা অবসাদ নয়।” তবে এই মানসিক অসুস্থতার বোধটা সম্বন্ধে কিছুটা সচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব এমন সমীক্ষার মাধ্যমে। ইউনিসেফের রিপোর্টেও তাই তাদের অবসাদগ্রস্ত না বলে বলা হয়েছে অবসাদের প্রবণতা রয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২১টি দেশের মধ্যে ক্যামেরুনের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজন মানসিক অসুস্থতা টের পায়। বরং ইথিওপিয়া বা জাপানের মতো দেশে সংখ্যাটা প্রতি ১০ জনে একজন। তবে “প্রকৃত সংখ্যাটা এমনভাবে বলা সম্ভব নয়। সমীক্ষকদের কাছে নিশ্চই এই পরিসংখ্যানের পিছনে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে, কিন্তু সেই তথ্যও নিশ্চই সমস্ত মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে ব্যাখ্যা করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।” এমনটাই মত অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ইউনিসেফের তরফ থেকে অবশ্য এই অবসাদের পিছনে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিকেই দায়ী করা হয়েছে। বহু দেশে এখনও পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে পড়ুয়ারা। তবে এই সিদ্ধান্তকেও সহজে মেনে নিতে রাজি নন অনুত্তমা। তাঁর মতে, “স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার প্রভাব সবার উপর একভাবে পড়বে, এমনটা নয়। যাদের অনলাইন পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে, তাদের জীবনে এই লকডাউনের প্রভাব যেভাবে পড়েছে, আর যাদের সেই সুযোগ নেই তাদের জীবনে যেভাবে পড়েছে – দুটো কোনোভাবেই এক করে দেখা যায় না।”

তবে এই সমীক্ষার ভিতর দিয়ে অন্তত একটি বিষয় স্পষ্টভাবেই উঠে আসছে, আর তা হল বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম মানসিকভাবে ভালো নেই। এবং এই পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই এগোচ্ছে। অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতেও, “এই সমীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক এটাই যে বহু শিক্ষার্থীকে এই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করানো হয়েছে, নিজের মধ্যের ভালো না থাকাকে চিহ্নিত করার একটা অবকাশ দিয়েছে। যদি সেটা খুব তীব্র হয় তাহলে আশা করা যায় অনেকেই এরপর চিকিৎসার দ্বারস্থ হবে।” এই সচেতনতাটুকু গড়ে তোলা আজকের দিনে ভীষণভাবে জরুরি।

Powered by Froala Editor