প্রবাল প্রাচীরের রক্ষাকর্তা এবার অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকরাই

আজ থেকে কয়েক বছর আগেও দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল তাঁদের কাঁধে। কাউকে পাঠানো হয়েছিল আফগানিস্তান, কেউ আবার লড়াই করেছেন ইরাকে। তবে দেশের হয়ে লড়তে গিয়ে মূল্যও দিতে হয়েছে তাঁদের। প্রাণ না-গেলেও, অনেকে হারিয়েছেন হাত-পা। নাম বাদ পড়েছে সেনা তালিকা থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এইসব অবসরপ্রাপ্ত আহত সৈনিকদেরই (Wounded Army Veterans) এবার নতুন করে রণক্ষেত্রে নামার, লড়াই করার সুযোগ দিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোটে মেরিন ল্যাবরেটরি’ (Mote Marine Laboratory)। না, দেশের নিরাপত্তা নয়, বরং এই লড়াই প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ফ্লোরিডা প্রদেশ। এই ফ্লোরিডা (Florida) সংলগ্ন মেক্সিকো উপসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরেই ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র প্রবাল প্রাচীর। যা পরিচিত ‘ফ্লোরিডা কিইস’ নামে। তবে বিগত কয়েক দশক ধরেই ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এই প্রাচীর। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলের অম্লতা বৃদ্ধির জন্য হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রবাল প্রাচীর।

এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই বছর কয়েক আগে যুদ্ধে নেমেছিল মোটে মেরিন ল্যাবরেটরি। নেপথ্যে গবেষক মাইকেল ক্রসবি। ল্যাবরেটরিতে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ ফিনোটাইপের প্রবালের প্রজনন করান তিনি। এই বিশেষ প্রবাল একদিকে যেমন ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে সহ্য করতে সক্ষম, তেমনই তীব্র অম্লতার প্রতিও তা সহনশীল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপকে দূরে সরিয়ে প্রবাল প্রাচীর বাঁচিয়ে রাখতে ল্যাবরেটরিতে তৈরি এই বিশেষ প্রবালের রোপণ শুরু করে অলাভজনক সংস্থা ‘মোটে মেরিন ল্যাবরেটরি’।

এতদিন পর্যন্ত প্রশিক্ষিত স্কুবা ডাইভাররাই সাগরের জলে ডুব দিতেন প্রবাল রোপণের জন্য। সম্প্রতি এই বিশেষ কাজের জন্য ‘মোটে মেরিন ল্যাবরেটরি’ গাঁটছড়া বাঁধে প্রাক্তন মার্কিন সৈনিকদের অলাভজনক সংগঠন ‘কমব্যাট উন্ডেড ভেটেরান চ্যালেঞ্জ’-এর। ডাইভিং-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৩১ জন অবসরপ্রাপ্ত আহত সৈনিককে। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অভিযানে নামেন তাঁরা। দীর্ঘ এক সপ্তাহের প্রচেষ্টায় মেক্সিকো উপসাগর বা গালফ অফ মেক্সিকোতে অবস্থিত ‘হিগস হেড’ প্রবাল প্রাচীরে রোপণ করেন ১০৪০টি নতুন প্রবালের ‘বীজ’।

অবশ্য এই কাজ সহজ ছিল না মোটেই। সাধারণত প্রবাল রোপণের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েকশো ফুট নিচে ডুব দিতে হয় ডাইভারদের। পেশাদার ডাইভারদের পক্ষে কাজটা কঠিন না-হলেও, অঙ্গ-ব্যবচ্ছেদের পর যে-কোনো মানুষের কাছেই এই কাজ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। তবে প্রাণের তোয়াক্কা তাঁরা কবেই-বা করেছেন? বরং, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সৈনিকদের কথায়, এই চ্যালেঞ্জিং কাজ যেন নতুন করে তারুণ্যের স্বাদ ফিরিয়েছে তাঁদের মধ্যে। নতুন করে শেখাচ্ছে দলবদ্ধ হতে। সচেতন করছে পরিবেশ সম্পর্কেও। শুধু বদলেছে যুদ্ধের ময়দানটুকুই।

Powered by Froala Editor