দাবানলের গ্রাসে পোল্যান্ডের জাতীয় উদ্যান, অজস্র প্রাণের ক্ষতির সম্ভাবনা

গত বছর থেকে দাবানল পৃথিবীর পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। একের পর এক দাবানলে ছাই হয়ে যাচ্ছে অরণ্য। আমাজনের পরে চিন, ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় বনভূমি ধ্বংস হয়েছে বিধ্বংসী আগুনে। মারা গেছে কয়েক কোটি বন্যপ্রাণী। ছাই হয়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। আবারো জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়লো আগুন। এবার শিকার হল পোল্যান্ডের একটি জাতীয় উদ্যান।

বিগত কয়েক দশকে এই প্রথম দাবানলের সাক্ষী থাকলো পোল্যান্ড। পোল্যান্ডের বিয়েবর্জা জাতীয় উদ্যান ছারখার হয়ে গেল অগ্নিকাণ্ডে। ছ’হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে এখনও জ্বলছে আগুন। ক্ষেত্রফলের নিরিখে, যা পুরো জাতীয় উদ্যানের ১০ শতাংশ। কার্যত এই দাবানল আরো ছড়িয়ে পড়লে বিপুল আকার ধারণ করতে পারে। কয়েকশো দমকলকর্মী অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার।

বিয়েবর্জা জাতীয় উদ্যানের ডিরেক্টর, আন্দ্রেজ গ্রাইগোরুক এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন মানুষের দায়িত্বহীনতা এবং নির্বুদ্ধিতাকেই। তিনি স্পষ্ট জানান, প্রাকৃতিকভাবে এই আগুন ছড়ায়নি। পোল্যান্ডে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা এখনও প্রখর হয়নি ততটা। সাম্প্রতিক কোনো ঝড়ও হয়নি ওই অঞ্চলে। কাজেই এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে যে মানুষেরই হাত রয়েছে, ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

পোল্যান্ডের পরিবেশমন্ত্রী জানান, কৃষকদের চাষের জমি পরিষ্কার করে আগুন জ্বালিয়েছিলেন ঘাসে। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে নিকটবর্তী অরণ্যে। তবে পোল্যান্ডে এই বছর কঠিন খরার মুখোমুখি। বৃষ্টির মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে শুষ্ক বনভূমিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে খুবই দ্রুত।

বিয়েবর্জার ট্যুর গাইড অগনিয়েস্কা জ্যাক বলেন, বসন্তের সময় এই আগুন ছড়িয়ে পড়ায় অভাবনীয় ক্ষয়ক্ষতি হবে পার্কের। তাঁর মতে, এই সময়েই নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। জন্মায় নতুন গাছ। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লেগে যাবে কয়েক মাস। শেষ হয়ে যাবে নতুন প্রাণের সম্ভাবনা।

এই ন্যাশনাল পার্কটির অবস্থান পোল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে। বেলারাস সীমান্তের কাছেই। এই উদ্যানে রয়েছে বিস্তীর্ণ নিচু জলাভূমি। সেখানে বসবাস বিবর এবং এল্কের। এছাড়া রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৫০০ প্রজাতির প্রজাপতি, ৪৫০ প্রজাতির মাকড়শা এবং ৫০০ প্রজাতির বিটল। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রজাতিই যে বিরল, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। এই বিপুল পরিমাণের বন্যপ্রাণের মৃত্যুর আশঙ্কাই এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে।