দৃষ্টিহীন ভোটারকে মানসিক হেনস্থার অভিযোগ কসবায়

“নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়েছিলাম ইলেকশন বুথে। পোলিং অফিসার তখন আমাকে হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, বলো তো কটা আঙুল!” ঠিক এভাবেই ভোট দিতে আসা নির্বাচকের দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা নিতে চাইলেন পোলিং অফিসার। বলছিলেন কসবা কেন্দ্রের দৃষ্টিহীন ভোটার সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় শিক্ষক সায়ন্তন ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ব্রেইল ইলেকশন স্লিপ চেয়েছিলেন পোলিং অফিসারের কাছে। আর তখনই সেই অফিসার সায়ন্তনের দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা নিতে চান।

“আমাদের সমাজে সবসময় নানা ধরণের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, অপমানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এরকম ব্যবহার সত্যিই খুব কষ্ট দেয়।” বলছিলেন সায়ন্তন। তবে তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত পোলিং অফিসার জানান নির্বাচন কেন্দ্রে নাকি কোনো ব্রেইল ব্যালটই নেই। “এমনকি বিষয়টি প্রিসাইডিং অফিসারকে জানানো হলে তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখলেন না।” এমনটাই জানালেন সায়ন্তন। কাজেই শেষ পর্যন্ত তিনি বাধ্য হলেন বাবার সাহায্য নিতে। ব্রেইল ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে সেই ব্যবস্থাই ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ভোটারদের জন্য। কিন্তু সেখানেও পোলিং অফিসার একটি সাদা কাগজে সই করতে বলেন। বেশ কিছুক্ষণ বাগবিতণ্ডার পর অবশেষে ৪৫-বি ফর্ম দেওয়া হয় তাঁকে।

সায়ন্তন জানিয়েছেন পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনারকে লিখিতভাবে জানাবেন তিনি। তাঁর কথায়, “এর আগে দুটি বিধানসভা এবং দুটি লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা আমার আছে। কিন্তু এরকম অব্যবস্থা কোনোদিন দেখিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ব্রেইল ইলেকশন স্লিপ পেয়েছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই তো স্পষ্ট বলা হয়েছে প্রতিটা বুথে ব্রেইল ইলেকশন স্লিপ রাখতে হবে।” এখানে শুধুই যে অব্যবস্থার অভিযোগ, তাই নয়। বরং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাযুক্ত একজন মানুষের সঙ্গে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠছে পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধে।

“বুথে বিভিন্ন দলের যে প্রতিনিধিরা ছিলেন, তাঁরা এসে পোলিং অফিসারকে বোঝালেন যে আমি সত্যিই এই কেন্দ্রের ভোটার এবং একজন দৃষ্টিহীন মানুষ। তার আগে আমার পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও বিকৃত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রশ্ন করলে বলা হয়েছে তাঁর উপর এমন নির্দেশ আছে।” সায়ন্তনের এই কথার সূত্র ধরেই বোঝা যায়, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের অবস্থানটা ঠিক কীরকম। রাজধানী কলকাতা শহরের বুকেই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে গ্রামগঞ্জের অবস্থাটা সহজেই অনুমেয়। স্বাধীনতার ৭ দশক পেরিয়ে এসে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ভোটাররা নিজেদের হাতে নির্বাচনী ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার পেয়েছেন। কিন্তু তাও যেন শুধুই খাতায় কলমে। চলতি নির্বাচনকে পাখির চোখ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে সবকটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচনী বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি সকলের ভোটাধিকার। আজও সেটাই অনিশ্চিত। সায়ন্তনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা আরও একবার সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Powered by Froala Editor

More From Author See More