দর্শকহীন পুজোর সিদ্ধান্ত সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের, একই পথে হাঁটবে অন্যরাও?

উত্তর কলকাতার পুজো মানেই কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক। যে পুজো দেখার জন্য মাইলখানেকের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ। জনস্রোতে ভেসে যায় কলকাতার রাজপথ। তবে এবছর ছবিটা একেবারেই অন্যরকম হতে চলেছে। দর্শকদের জন্য এবার বন্ধ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের প্রবেশপথ। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়ে দিল পুজো কমিটি। 

রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৩ লক্ষের গণ্ডি। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এখন সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু তার পরেও কলকাতার প্রি-পুজোর নির্ভীক শপিংই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কাছে। বারবার সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা। পুজোয় এই ভিড়ই বৃদ্ধি পেতে পারে কয়েকগুণ। যা নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের। দূরত্ববিধি কি আদৌ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে পুজোর মরশুমে?

কার্যত এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই উদ্যোগ নিয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো কমিটি। বুধবারই পুজো কমিটির তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখিত হয়েছে, এবার পুজো প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র প্রবেশের অনুমতি মিলবে পল্লীবাসীদের। ওই বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য পুজো কমিটিদেরও এই উদ্যোগে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির সভাপতি প্রদীপ দাস এবং সম্পাদক সজল ঘোষ। 

তবে পুজোর মণ্ডপ দর্শকদের জন্য বন্ধ করা হলেও তার বিকল্প খুঁজে নিয়েছে পুজো কমিটি। হাত ধরেছে প্রুযুক্তির। প্রতিমা দর্শন থেকে পুজোর সমস্ত ভিডিয়োই ধরা থাকবে পুজো কমিটির ফেসবুক পেজে। ফলে আক্ষেপ থাকবে না দর্শকদেরও। 

আরও পড়ুন
ফিরছে ডবল ডেকার বাস, পুজোয় নস্টালজিয়ার ছোঁয়া কলকাতায়

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের এই অভিনব উদ্যোগের পর বেহালার দেবদারু ফটক পুজো কমিটিও বন্ধ করেছে 'ফটক'। এবারের পুজোকে ‘ডিজিটাল’ মাধ্যমে স্থানান্তরিত করার পথে তাঁরাও। কিন্তু বাকিরা? লকডাউনের পর থেকেই ধীরে ধীরে খুলে গেছে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রই। অর্থনৈতিক দিকের কথা চিন্তা করেই উঠে গেছে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সংক্রমণ কি সত্যিই কমে গেছে? ভাইরাস বিদায় নিয়েছে রাজ্য থেকে? সে কথা যেন এক রকম ভুলেই গেছে রাজ্যবাসী। বড়-সড় ফাঁক রয়ে যাচ্ছে মানুষের সচেতনায়। এমনকি ভিড়ের মধ্যেও চোখে পড়ছে না মাস্কের ব্যবহার। 

পুজোর চারটে দিনও এমনই বাঁধ ভাঙা মানুষের ঢল রাস্তায় নামলে আকাশ ছোঁবে সংক্রমণ। সরকারি সতর্কতায়ও যে খুব কিছু কাজ হবে, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সেদিক থেকে পুজো কমিটির এমন সিদ্ধান্ত অনেকটাই শাপে বর হওয়ার মতোই। সংক্রমণ প্রতিরোধে এই অভিনব পন্থা নিঃসন্দেহে প্রশংসাজনক। তবে পুজোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে যে সকল ছোটো ব্যবসায়ীদের উপার্জন। ক্ষতির সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। লকডাউনের মন্দার বাজারের পর সামান্য লাভের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা সকলেই। মানুষ রাস্তায় না নামলে, কীভাবে হবে তাঁদের অর্থাগম? তাঁদের জন্য কি বিশেষ কোনও উদ্যোগের কথা কথা ভাবছেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা এমন অন্যান্য পুজো কমিটিগুলি? তা অধরা এখনও...

আরও পড়ুন
এ.সি. ট্রাম, সঙ্গে ফ্রি ওয়াইফাই; পুজোমণ্ডপ ঘুরিয়ে দেখাতে বিশেষ উদ্যোগ কলকাতায়

Powered by Froala Editor

More From Author See More