বাম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে ফুরোল ছাত্র আন্দোলনের একটি অধ্যায়ও

অবশেষে করোনার থাবা এসে পড়ল বাংলার রাজনৈতিক মহলেও। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫০ নাগাদ মারা গেলেন শ্যামল চক্রবর্তী। কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালেই ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে নিলেন ৭৬ বছরের বর্ষীয়ান বাম নেতা। প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদের মৃত্যুতে বাংলার রাজনৈতিক মহলে নেমেছে শোকের ছায়া।

১৯৪৪ সালে পূর্ববঙ্গে জন্ম শ্যামল চক্রবর্তীর। তারপর দেশভাগের সময় চলে আসেন কলকাতায়। শিক্ষাজীবন এবং বেড়ে ওঠা এখানেই। ছাত্রাবস্থা থেকেই একাধিক বাম আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ষাটের দশকে কলকাতায় ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধি বিরোধী আন্দোলনের সময় বাম ছাত্রসংগঠনের সামনের সারির নেতা ছিলেন তিনি। চোখের সামনে দেখেছেন দলের মধ্যে অসংখ্য বিতর্ক এবং ভাঙন। সেসব ঘটনার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পরে প্রকাশ করেছিলেন ‘ষাট সত্তর ছাত্র আন্দোলন’। দুই দশকের উত্তাল সময়ের অসংখ্য দলিল এবং ছবি নিয়ে এমন কাজ বাংলার রাজনীতির ইতিহাসের এক সম্পদ হিসাবে থেকে যাবে।

ছাত্রজীবনের শেষে শ্যামল চক্রবর্তী মূলত কাজ করেছেন শ্রমিকদের মধ্যেই। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকাকালীনও তাঁর পরিচয় ছিল মূলত সিটু নেতা। আবার জ্যোতি বসুর বাম সরকারের প্রশাসনিক কাজেও গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছেন তিনি। সামলেছেন পরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্বও। রাজ্যসভাতেও সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকার সময়েও শ্যামল চক্রবর্তী ছিলেন একেবারেই বাংলার নেতা।

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা উপসর্গ দেখা দিয়েছিল শ্যামল চক্রবর্তীর শরীরে। ফুসফুসের সংক্রমণের জন্যও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আগে। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য কোনোদিনই কাহিল দেখায়নি তাঁকে। কিন্তু গত ৩০ জুলাই শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আর শেষ রক্ষা করা সম্ভব হল না। প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে করোনা সংক্রমণের নমুনা পাওয়া না গেলেও শনিবার তাঁকে পিয়ারলেস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আর রবিবার পাওয়া রিপোর্টে তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছিলেন তাঁর কন্যা অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী। এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেও সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ঊষসী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ জয় করে বাড়ি ফেরা আর হল না।

শ্যামল চক্রবর্তীর মরদেহ করোনা প্রোটকল মেনেই সৎকার করা হবে বলে রাজ্য সিপিআইএমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কোনরকম জনসমাগম মৃতদেহকে ঘিরে করা যাবে না। পাশাপাশি তাঁর স্মৃতিতে রাজ্যের সমস্ত পার্টি অফসে পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে। তবে শুধুই সিপিআইএম নয়, শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যু বাংলার সমস্ত রাজনৈতিক মহলকেই শোকস্তব্ধ করেছে। বঙ্গরাজনীতির এক অভিভাবক চলে গেলেন করোনা ভাইরাসের আক্রমণেই।

Powered by Froala Editor

More From Author See More