ছাদ নিচে, মেঝে শূন্যে ভাসমান— বিশ্বের কিছু ‘উল্টো’ বাড়ির গল্প

/৮

মাটির সঙ্গে ঠেকে রয়েছে বাড়ির ছাদ, মেঝে শূন্যে ভাসমান। প্রচণ্ড বলশালী কোনো ব্যক্তি যেন ধরে উল্টে দিয়েছেন আস্ত একটি বাড়িকে। এমন আশ্চর্য স্থাপত্যকে শুধুমাত্র শীর্ষাসনের ভঙ্গিতেই সোজা বলে মনে হতে পারে। না, কোনো বিপর্যয় কিংবা অতিমানবের তাণ্ডবে উল্টে যায়নি আস্ত বাড়ি, বরং রীতিমতো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হয় সেগুলিকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত এই আশ্চর্য বাড়িগুলি স্থাপত্যজগতে পরিচিত ‘আপসাইড ডাউন হাউস’ নামে। একঝলক দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু বাড়ির নিদর্শন।

/৮

ওয়ান্ডারওয়ার্কস— ‘সায়েন্স সিটি’ যেমন পশ্চিমবাংলার অন্যতম বিজ্ঞান প্রদর্শনীকেন্দ্র, তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ‘ওয়ান্ডারওয়ার্কস’। মাইর্টল বিচ, সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া, অরল্যান্ডো, ফ্লোরিডা, পানামা সিটি বিচ, নিউইয়র্ক-সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে ‘ওয়ান্ডারওয়ার্কস’-এর শাখা। নিউইয়র্কের ভবনটি বাদ দিলে, অন্যান্য প্রতিটি ভবনই ‘আপসাইড ডাউন হাউস’। প্রতিটি ভবনকেই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা দেখলে মনে হয় মানবসভ্যতার ইতি পড়েছে কোনো বড়ো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। এমনকি এই ‘ওয়ান্ডারওয়ার্কস’-এর সৌজন্যেই পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘আপসাইড ডাউন হাউস’।

/৮

হাউস স্টেট কপ্ফ— অস্ট্রিয়ার ছোট্ট গ্রাম তিরোল। সেখানে গেলেই দেখা মিলবে এই আশ্চর্য বাড়ির। ২০১২ সালে নির্মিত হয়েছিল এই বিশেষ ভবনটি। মজার বিষয় হল, শুধু বাইরের দিক থেকেই নয়, বাড়ির ভেতরেও সমস্ত আসবাবপত্র এবং সামগ্রীকে উল্টে থাকতে দেখা যায় এখানে। সিলিং, থুড়ি শূন্যে ভাসমান ‘মেঝে’-তেই সেখানে আটকানো রয়েছে ভগসওয়াগানের আস্ত একটি গাড়িও। এই বাড়িটিও ব্যবহৃত হয় মিউজিয়াম হিসাবেই।

/৮

নায়াগ্রা’স আপসাইড ডাউন হাউস— নায়াগ্রা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে জলপ্রপাতের ছবি। হ্যাঁ, সেই জলপ্রপাতের অদূরেই ২০০৮ সালে তৈরি হয় ১২০০ বর্গফুটের একটি প্রকাণ্ড ‘উল্টো বাড়ি’। নেপথ্যে দুই পোলিশ অভিযাত্রী ক্লডিয়াস ও সেবাস্তিয়ান। নায়াগ্রা কানাডার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। প্রতিবছরই সেখানে জড়ো হন লক্ষ লক্ষ পর্যটক। তাঁদের বিশেষ আকৃষ্ট করতেই এই আপসাইড ডাউন বাংলো তৈরির পরিকল্পনা করেন দুই বন্ধু। বলাই বাহুল্য, বিশেষভাবে সফল হয়েছিল তাঁদের এই বাণিজ্যিক উদ্যোগ।

/৮

জিমবার্ক ম্যাজিক হাউস— ক্লডিয়াস ও সেবাস্তিয়ানের সূত্র ধরে এবার ফিরে যাওয়া যাক পোল্যান্ডে। কানাডায় এই দুই বন্ধুর ব্যবসা রমরমিয়ে চললেও, উল্টোবাড়ি তৈরির কর্মকাণ্ডে তাঁদের থেকেও এগিয়ে রয়েছে পোল্যান্ডের ভিন্ন এক ব্যক্তি— ড্যানিয়েল জ্যাপিউস্কি। একুশ শতকের শুরুতেই এই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন এই পোলিশ শিল্পপতি। ১৯৭০-এর দশকের কমিউনিস্ট শৈলীতে তৈরি এই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৭ সালে। অবশ্য এই বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা নেই কোনো। বরং, তা ব্যবহৃত হয় জিমবার্কের শিক্ষা ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির প্রচারকেন্দ্র হিসাবে।

/৮

ওয়াল্ড-উইপফেল ওয়েফ— কথাটার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘উল্টে যাওয়া বাড়ি’। জার্মানির ব্যাভেরিয়া প্রদেশের বায়ার্নে গেলেই দেখা মিলবে এই বাড়িটির। বায়ার্নে অবস্থিত একটি ছোট্ট থিমপার্কের অংশ হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল এই বাড়িটি। এই বাড়ির মধ্যেই রয়েছে ইলিউশনের গ্যালারি, কাচের তৈরি গোলকধাঁধা। মূলত শিশু-কিশোরদের জন্যই তৈরি এই বাড়ি। এই বাড়িতে প্রবেশের ছাড়পত্র পান না প্রাপ্তবয়স্করা।

/৮

হাউস অফ কাঠমান্ডু পার্ক— কাঠমান্ডু শুনলেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের রাজধানীর ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তবে ‘কাঠমান্ডু পার্ক’-এর সঙ্গে নেপালের যোগ নেই কোনো। সুদূর স্পেনের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে এই আশ্চর্য অ্যামিউজিং পার্ক। কয়েক হাজার বর্গফুটের এই প্রকাণ্ড ভবনটির বাইরের অংশ নির্মিত উল্টোবাড়ির ভঙ্গিতে।

/৮

ডুয়ার্সের উল্টোবাড়ি— সবশেষে এবার ফিরে আসা যাক বাংলায়। হ্যাঁ, পশ্চিমবাংলার বুকেও রয়েছে এমন আশ্চর্য নিদর্শন। আর তা প্রত্যক্ষ করতে গেলে ছুটতে হবে ডুয়ার্স। জলপাইগুড়ির বানারহাটে অবস্থিত ‘ফান সিটি’। এই ছোট্ট অ্যামিউজিং পার্কটিই বাংলার একমাত্র উল্টোবাড়ির বাসস্থান। বাইরে থেকে তো বটেই, এই বাড়ির ভেতরেও সমস্ত আসবাবপত্র রাখা রয়েছে ছাদ অর্থাৎ বাড়ির মেঝে থেকে ঝুলন্ত অবস্থায়। এমনকি বাড়ির সামনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যাবে আস্ত একটি গাড়িকেও। আট থেকে আশি— সকলেরই নজর কেড়েছে এই আশ্চর্য বাড়ি। এমনকি এই বাড়িকে কেন্দ্র করেই সাম্প্রতিক সময়ে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডুয়ার্সের ‘ফান সিটি’।

Powered by Froala Editor