এই মুহূর্তে করোনায় সবথেকে বেশি সমস্যায় আমেরিকা। একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছেন, আক্রান্তও হচ্ছেন অনেকে। সংখ্যাটা কত, সেটা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। তারই মধ্যে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা মানুষের ভেতরের ক্ষোভকে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। গোটা আমেরিকা আজ জ্বলছে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে। পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা সবাই। এদিকে পশ্চিমবঙ্গও করোনা আর ঘূর্ণিঝড়ের জোড়া থাবায় বিপর্যস্ত। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকে। এগিয়ে এসেছেন জেসন আর লিজও। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আমফানের জন্য সাহায্য পাঠিয়েছেন তাঁরা। মানবিকতা এভাবেই ভেঙে দিল সমস্ত বেড়া, সীমানা…
সায়নী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে জেসন আর লিজের কথা প্রহরে আগেই পড়েছেন আপনারা। অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে গবেষণার কাজে গিয়েছিলেন তরুণ ভূ-বিজ্ঞানী সায়নী। সেখানেই আলাপ জেসন ও লিজের পরিবারের সঙ্গে। দুজনেই নার্স, করোনার পরিস্থিতিতে এমনিই ব্যস্ত তাঁরা। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বও হয়ে যায় পরস্পরের সঙ্গে। দূরত্ব বেড়ে গেলেও, মোছেনি সেই সম্পর্ক।
সেই সূত্রেই সম্পূর্ণ মানবিকতার দিক থেকেই আমফান-বিধ্বস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিলেন জেসন এবং লিজ। কথাপ্রসঙ্গে সায়নী প্রহরকে বলছিলেন, “ফিরে আসার পরও প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ হত ওদের সঙ্গে। করোনায় কেমন আছে সবাই, কী পরিস্থিতি, এসবই কথা চলত। আমফানের পরে যখন কথা হল, তখনই এই সাইক্লোনের কথা জানাই ওদের। সেই কথা শোনার পরই জেসন আর লিজ আমায় কুড়ি হাজার টাকা পাঠায়। আমফানে যেখানে যেখানে ক্ষতি হয়েছে সেখানে যাতে এই সাহায্য পৌঁছে যায় সেটাই চেয়েছে ওরা।”
আমেরিকার এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে জেসন ও লিজ দুজনেই অত্যন্ত ব্যস্ত। সর্বক্ষণ রোগীদের সঙ্গে কাটছে। সেই সঙ্গে তাঁদের সন্তানও জন্মগ্রহণ করেছে কয়েকমাস আগে। খুব যে বিত্তশালী পরিবার, তাও নয়। কিন্তু সেসবের বাইরেও তাঁদের পরিচয় একজন মানুষ হিসেবে। তাই সব ভুলে পশ্চিমবঙ্গের আমফান-বিধ্বস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। সায়নীও ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় সেই টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। কলেজ স্ট্রিট ও সুন্দরবনের পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন, সেইরকম কয়েকজনের কাছেই পৌঁছে গেছে টাকা। এভাবেই কাঁটাতার মুছে যায়; মনুষ্যত্ব বেঁচে থাকে। হিংসা, হানাহানির মধ্যেও সূর্যের দেখা মেলে, সেটাই প্রমাণ করলেন জেসন-লিজরা।
আরও পড়ুন
ছোট্ট মরুশহর ফিনিক্স, একটি বৃহৎ সামাজিক পরিবার এবং মহামারীর গল্প
Powered by Froala Editor