পাহাড়ি 'অন্তর্ধান' ও রনি-গোয়েন্দার কিসসা

“রনিদাকে আমি এবার থেকে আর রনিদা বলে ডাকব না। নতুন একটা নাম দিয়েছি। ডার্টি হ্যারি।” অভিনেতা রজতাভ দত্ত সম্পর্কে বলছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। গতকাল শেক্সপিয়ার সরণির ‘দ্য অ্যাস্টর’ হোটেলে পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যের আসন্ন থ্রিলার সিনেমা ‘অন্তর্ধান’-এর ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বসেছিল চাঁদের হাট। পরিচালকের সঙ্গে সিনেমার দুই মুখ্য শিল্পী পরমব্রত ও তনুশ্রী তো ছিলেনই। সঙ্গে ছিলেন রজতাভ দত্ত, মমতা শঙ্কর, নবাগতা মোহর। এই সিনেমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অক্ষয় কাপুর, প্রথমেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি বাংলা বলতে পারি। তবে এখানে আমাকে দেখা যাবে হিমাচলের এক যুবকের চরিত্রে।”

২০১৯ সালে ‘অন্তর্ধান’-এর যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে যায়। তারপর কোভিড অতিমারীর কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত সিনেমাহল। পরিস্থিতির কারণেই বারবার ‘অন্তর্ধান’-এর মুক্তির সময় পিছিয়েছে। অবশেষে মুক্তির চূড়ান্ত দিন ঘোষণা করা হয়েছে গত মাসেই। আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলার প্রেক্ষাগৃহগুলিতে মুক্তি পেতে চলেছে সিনেমাটি। স্বাভাবিকভাবেই দর্শকদের মতোই মুখিয়ে রয়েছেন সিনেমার নির্মাতা এবং কলাকুশলীরাও। প্রত্যেকের কাছেই এই সিনেমা যেন এক নতুন অভিজ্ঞতার জায়গা। অন্তরঙ্গ কথাবার্তায় উঠে আসছিল বছর দুয়েক আগে হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি উপত্যকায় শুটিং-এর অভিজ্ঞতার কথাও। সবাই মিলে হইহই করে চলেছিল সিনেমা তৈরির কাজ। এতদিনের পোর খাওয়া অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে রীতিমতো আত্মীয়তার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছেন নবাগতা মোহরও।


হিমাচল প্রদেশ প্রবাসী বাঙালি দম্পতি পরমব্রত-তনুশ্রীর মেয়ে মোহর। হঠাৎই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় সে। আর এই ঘটনাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে রহস্যের বুনট। পরমব্রত বলছিলেন, “বাংলা সাহিত্যে যেমন দেখা যায় খুব অল্প জায়গায় সামান্য কিছু মানুষকে ঘিরে একটা টানটান রহস্যের উত্তেজনা তৈরি হয়; এই সিনেমাতেও ঠিক তেমন একটা মেজাজ পাওয়া যাবে।” আর এই রহস্য সমাধানেই আসবেন রজতাভ দত্ত। সিনেমায় তিনি একজন গোয়েন্দা। এক সময় বাংলা সিনেমায় খলনায়ক বলতেই ছিলেন রজতাভ দত্ত। তারপর নানা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে ‘অন্তর্ধান’-এ তাঁর চরিত্রটির মধ্যেও অনেক বেশি সূক্ষ্ম মানবিক টানাপোড়েন রয়েছে, জানালেন তিনি। “মানুষ তো থ্রিলার দেখতে এখনও ভালোবাসেন। আমারও দেখতে ভালো লাগে, আর অভিনয় করতেও ভালো লেগেছে।” বলছিলেন রজতাভ। ইতিপূর্বে দুটি সিনেমা বানিয়েছেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। এবং সেই দুটিই থ্রিলার সিনেমা। এই ঘরানাটিতে বেশ স্বচ্ছন্দ এবং পরিণত হয়ে উঠেছেন পরিচালক, বলছিলেন শিল্পীরা। অবশ্য ভবিষ্যতে যে তিনি অন্য ধারার সিনেমাও বানাতে পারেন, তেমন আভাস দিলেন পরিচালক। বললেন, “অন্য কিছু বানাতে ইচ্ছে হলে অবশ্যই বানাব।”

অরিন্দম ভট্টাচার্যের সিনেমা মানেই সেখানে মমতা শঙ্করের উপস্থিতি অনিবার্য। ‘অন্তর্লীন’ এবং ‘ফ্ল্যাট নং ৬০৯’-এর পর আবারও দেখা যাবে তাঁকে। সিনেমা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মমতা শঙ্কর যে যথেষ্ট বিচারপন্থী, এ-কথা সকলেই জানেন। তারপরেও কেন অরিন্দম ভট্টাচার্যের প্রতিটা সিনেমায় দেখা যায় তাঁকে? “তার কারণ ও বোকা বোকা সিনেমা বানায় না। সবার সঙ্গে তো কাজ করতেও ভালো লাগে না। অরিন্দম মানুষটাও এত ভালো, কাজ করতে ভালো লাগে।” জানালেন তিনি। সবাই মিলে গড়ে তোলা এই সিনেমা যে শেষ পর্যন্ত দর্শকদের ভালো লাগবে, সে-বিষয়ে আশাবাদী সকলেই। তবে এখনও বাংলার প্রেক্ষাগৃহগুলিতে দর্শক কমই আসছেন। পরমব্রত আশাবাদী, “সময় যত এগোবে মানুষের আশঙ্কাগুলো অনেকটা কমবে। দর্শকের সংখ্যাও বাড়বে।” অন্যদিকে পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যও তো এতদিন ধরে প্রেক্ষাগৃহের জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সিনেমাটি। নাহলে অনেক আগেই কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর কথায়, “একটা সিনেমা তৈরি হওয়ার সঙ্গে বড়ো পর্দাটাও খুব প্রয়োজন। ছোটো পর্দায় সব গল্প বলা যায় না।” ভবিষ্যতেও তিনি ওয়েবসিরিজ তৈরির কথা ভাবছেন না বলেই জানালেন অরিন্দম। আবার মমতা শঙ্করও বলছিলেন, “বাড়িতে বসে সিনেমা দেখতে তো ভালো লাগে না। সিনেমা হলে বসে পপ-কর্ন খেতে খেতে সিনেমা দেখার অনুভূতিই অন্যরকম।” এই সমস্ত আশা, উদ্বেগ এবং প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। আপাতত তার একটি ঝলক শুধু প্রকাশিত হল।

Powered by Froala Editor

More From Author See More