বক্সা জঙ্গল থেকে রাউলিংয়ের উপন্যাস — বাংলার নেত্রপ্রসাদের নতুন ‘জাঙ্গল বুক’

এ যেন স্বপ্নের হগওয়ার্ডস! কিংবা বলা যায় আরেকটা জাঙ্গল বুকের আখ্যান। যেখানে হ্যারি পটার, মোগলিরা নেই; আছে রক্তমাংসের একটি মানুষ। যিনি কথা বলেন গাছপালার সঙ্গে। যার হাত ধরে পথ চিনে নেয় জীবজন্তুরা। জে কে রাউলিংয়ের কলম ধরে তিনিও ফুটে উঠছেন আমাদের সামনে। এই বছরেই প্রকাশিত হবে রাউলিংয়ের সাম্প্রতিক বই। আর সেই গল্পের মুখ্য চরিত্র লুকিয়ে আছে এই বাংলায়, বক্সার জঙ্গলে। হ্যারি নয়, এখানে জাদুকাঠি ধরে আছেন নেত্রপ্রসাদ শর্মা।

প্রথমেই যে বলা হল, এ এক অন্য রূপকথা! নেত্রপ্রসাদ বক্সা জঙ্গলের একজন টুরিস্ট গাইড। সাধারণ, আমার আপনার মতই। অরণ্য সংলগ্ন বস্তি অঞ্চলে বেড়ে ওঠা তাঁর। পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। ছোটো বয়সেই গাইডের চাকরি বেছে নেন তিনি। বাধ্য হয়ে তো বটেই, কিন্তু মনে মনে কোথাও একটা যোগাযোগ কি তখনও ছিল না?

সাধারণ তো বলা হল, কিন্তু সত্যিই কি তাই? নেত্রপ্রসাদের কাজ দেখলে এই প্রশ্নটাই মাথায় আসবে। তিনি এলেই জঙ্গল যেন নিজে থেকেই এসে ধরা দেয় তাঁর কাছে। জঙ্গলের কোথায় কোন ফুলটি ফুটে আছে, কোথায় কোন বিশেষ গাছ, বন্য জন্তু-পাখিদের আড্ডাই বা কোথায়- সব কিছু নখদর্পণে তাঁর। এমনকি, বহুদূরে থেকেও বলে দিতে পারেন বাইসন, বাঘের অবস্থান। বাতাসে গন্ধ শুঁকে চলে যান প্রাণীদের ডেরায়। জঙ্গলে যত পাখি, গাছ, প্রাণী আছে, তাদের সমস্ত তথ্য থাকে তাঁর মাথায়। কেউ প্রশ্ন করলে, গড়গড় করে বলে দেন নেত্রপ্রসাদ।

ঠিক যেন গল্পের মোগলি বড় হয়ে ফিরে এসেছে বক্সার জঙ্গলে। তেমনটাই ভেবেছিলেন আমেরিকা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা। পেশাগত কারণে বাংলা, হিন্দি, গোর্খালি ভাষার সঙ্গে ইংরেজিতেও সড়গড় বছর চল্লিশের নেত্র। তাঁর এই অদ্ভুত ক্ষমতাগুলি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁরা। নেত্রপ্রসাদের একটি ইন্টারভিউও নেন। আর সেটাই নজরে পড়ে লেখিকা জে কে রাউলিংয়ের।

কোনোদিনও বক্সার জঙ্গলে আসেননি রাউলিং। নেত্রপ্রসাদের সাক্ষাৎকার আর নিজের কল্পনা— সমস্ত কিছু মিলিয়ে লিখে ফেলেন উপন্যাস। নাম ‘দ্য হোয়াটস লেফট অফ দ্য জাঙ্গল বুক’। নতুনভাবে যেন দেখতে পেলেন সেই কিংবদন্তি কাহিনিকে। ফোনের মাধ্যমে সূত্র মারফত নিজেই কথা বলেন নেত্রপ্রসাদের সঙ্গে। আপাতত, উপন্যাস লেখা শেষ। এখনও কিছু পরিবর্তন বাকি। তাই রাউলিংয়ের ব্যবস্থাপনায় জুলাইতে ক্যালিফোর্নিয়া উড়ে যাচ্ছেন নেত্রপ্রসাদ। পাসপোর্ট, ভিসা সব তৈরি। সব ঠিক থাকলে, এই বছরের শেষেই প্রকাশ পাবে জে কে রাউলিংয়ের এই নতুন বই।

আর নেত্রপ্রসাদ? তিনি এখনও ঘোরে আছেন। যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না এসব কিছু। ঠিক হগওয়ার্ডসে যাওয়ার আগে হ্যারির যেরকম হয়েছিল। নেত্রপ্রসাদ কি হ্যারিকে চেনেন? তাঁরা যে একই নৌকার যাত্রী এখন!