জন্মহার কমছে ভারতে, উন্নতি শিশুস্বাস্থ্যেও

পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারত। সেইসঙ্গে চিরকালই এই দেশের জন্মহার (Fertility Rate) যথেষ্ট বেশি। সারা পৃথিবীতে যেখানে ২.১ জন্মহারকেই একটি দেশের নিরাপদ বলে ধরা হয়, ভারতে সেই অনুপাতটি কোনোদিনই তার নিচে নামেনি। তবে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের সর্বশেষ সমীক্ষার ফলাফল দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রথম দেশের জন্মহার ২.১-এর নিচে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালের সমীক্ষায় সমীক্ষায় যেখানে জন্মহার ছিল ২.২, এবার সেটা ২.০-তে নেমেছে। আর এই রিপোর্টকে জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচারের সাফল্য বলেই দেখছেন তাঁরা।

জন্মহার ২.০ বলতে বোঝানো হয়েছে, দেশের প্রতিজন নারী গড়ে ২টি সন্তানের জন্ম দেন। ‘আমরা দুই, আমাদের দুই’ – এই স্লোগান দিয়েই শুরু হয়েছিল ভারতের পরিবার পরিকল্পনার প্রচার। এবার সেই প্রচার সাফল্যের মুখ দেখল। শুধু সার্বিকভাবেই নয়, দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই জন্মহার ২.০-এর নিচে রয়েছে। কেবলমাত্র মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের জন্মহার ২.১-এর বেশি। এই সাফল্যের পিছনে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে সচেতনতা এবং গর্ভনিরোধকের ব্যবহার বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, গর্ভনিরোধকের ব্যবহার ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ হয়েছে।

গর্ভনিরোধকের ব্যবহার নিয়ে ভারতের বড়ো অংশের মানুষের মধ্যে কুসংস্কার তো ছিলই। সেইসঙ্গে প্রথম পর্যায়ে গর্ভনিরোধকের অপরিকল্পিত ব্যবহার বেশ কিছুটা আতঙ্কেরও সঞ্চার ঘটিয়েছিল। তাছাড়া আজ থেকে এক দশক আগেও দেশে খুব বেশি ধরনের গর্ভনিরোধক পাওয়া যেত না। বর্তমানে সেই সুযোগ অনেকটাই বেড়েছে। জন্মহার কমার পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোরও সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। শিশুদের প্রতিষেধক প্রদানের হার ৬২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৬ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া দেখা গিয়েছে, বর্তমানে ৬৪ শতাংশ শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত কেবল মাতৃদুগ্ধ পান করে। ২০১৫ সালের সমীক্ষায় যে সংখ্যাটা ছিল ৫৫ শতাংশ। শিশু স্বাস্থ্য এবং দেশে বাসস্থানের অভাব – এই দুই সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই জর্জরিত ভারত। অবশেষে সেই দুই সমস্যাই দূর হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

Powered by Froala Editor