রবীন্দ্রনাথের ‘তন্বী ইছামতী’ নদীতে আজ আবর্জনার স্তূপ

ইছামতী নদীর কথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। ভারত-বাংলাদেশের সীমানা বরাবর বয়ে গিয়েছে নদীটি। বা, নদী নিজেই সীমানা হয়ে গিয়েছে দু-দেশের। টাকিতে ইছামতীর পাড়ে বেড়াতেও গিয়েছেন অনেকেই। তবে এখানে যে ইছামতীর কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের চিরপরিচিত ইছামতী নয়। একই নামের হলেও, এ হল বাংলাদেশের পাবনা জেলার ইছামতী। পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে এবং ৪৪ কিলোমিটার বয়ে গিয়ে পড়েছে হুরসাগর নদীতে।

একসময় ‘পাবনার দুঃখ’ বলা হত ইছামতীকে। খরস্রোতা সেই নদীই আজ দূষণের কারণে মজে যেতে বসেছে। আবর্জনাময় একটি খাল ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না নদীটিকে দেখে। সত্তরের দশকেও বাংলাদেশের পাবনা পৌর এলাকায় প্রায় ১০ কিমি বিস্তৃত ও ৯০ থেকে ২০০ ফুট প্রশস্ত ছিল ইছামতী। বর্তমানে নগরায়নের প্রভাবে প্রশস্ততা কমে ঠেকেছে ৩০ ফুটে।

সংস্কারের অভাবে আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে নদীটি। সামাজিক আন্দোলন, আইনি পদক্ষেপ কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। পাবনার বাড়িঘর, দোকান, ক্লিনিক – সবকিছুর ময়লাই ফেলা হয় ইছামতীতে। দখল হয়ে গিয়েছে নদীর দুই পাড়ও।

১৬০৮ সালে তৎকালীন বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ পদ্মা ও যমুনা নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি খাল খনন করান, যা পরে ইছামতী নাম ধারণ করে। এই নদী দিয়েই কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি থেকে শাহাজাদপুরের কাছারিবাড়িতে যাতায়াত করতেন রবীন্দ্রনাথ। লিখেছিলেন – ‘অয়ি তন্বী ইছামতী, তব তীরে তীরে/শান্তি চিরকাল থাক্ কুটিরে কুটিরে-/শস্যে পূর্ণ হোক ক্ষেত্র তব তটদেশে/বর্ষে বর্ষে বরষায় আনন্দিত বেশে।’

পাবনার আপামর মানুষের সচেতনতা না বৃদ্ধি পেলে এ-নদীর চেহারা ফিরবে না। দিনকেদিন মৃত্যুর দিকে এগোবে আরও। সামান্য কয়েকজনের উদ্যোগ বা অনশন নয়, এখন প্রয়োজন গণজাগরণের। সুদিন আসবে কবে?