গল্প, খেলা নাকি রহস্যোপন্যাস? ওমনিপিডিয়া ও ‘ভবিষ্যতের’ বিশ্বকোষ

কয়েকটা ছোটো ছোটো টুকরো দিয়ে গড়ে তোলা একটা পৃথিবী। ঠিক উইকিপেডিয়ার (Wikipedia) লোগোর মতোই একটা লোগো। ঠিক নয় অবশ্য। যেন একটু আধুনিক সংস্করণ। আর সেই লোগোর নিচে লেখা ওমনিপিডিয়া (Omnipedia)। নতুন এই অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়াটা দেখলেই বুঝবেন আপনি ঢুকে পড়েছেন একটি খেলার মধ্যে। যার নাম নিউরোক্রেসি (Neurocracy)। খেলাও বলতে পারেন, আবার একটা কল্পবিজ্ঞানের রহস্যে ভরা উপন্যাসও বলতে পারেন। অথবা এক অন্য জগতের ইন্টারনেট। যে জগৎ আজ থেকে প্রায় ৪ দশক পরের কথা বলে। কারণ এই ওমনিপেডিয়া তৈরি হয়েছে ২০৪৯ সালে। হ্যাঁ, তেমনটাই লেখা রয়েছে ওয়েবসাইটের হোমপেজে।

২০৪৮ সালে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় উইকিপিডিয়া। আর ঠিক তার পরের বছরই তৈরি হয় ওমনিপিডিয়া। এমনটাই জানাচ্ছে ওমনিপিডিয়ার হোমপেজ। চিনের তরুণ উদ্যোগপতি টনি জিয়াং এবং বহুজাতিক সংস্থা জুপাও-এর কর্ণধার সু সায়ওং-এর উদ্যোগে তৈরি হয় এই নতুন এনসাইক্লোপিডিয়া। কিন্তু এই নতুন উদ্যোগ শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে খুন হয়ে যান সায়ওং। ওমনিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তিনি সেই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। অথচ বিশ্বের কোনো গোয়েন্দা সংস্থাই তাঁর মৃত্যুর হদিশ পাচ্ছে না। এই জায়গা থেকেই রহস্যের মধ্যে ঢুকে পড়তে বাধ্য আপনিও। তারপর একটু একটু করে আপনিই খুঁজতে থাকবেন হত্যার ছক। আর আপনার সামনে সমস্ত তথ্য মেলে ধরবে ওমনিপিডিয়া।

তবে উপন্যাসের মতো লেখকের কথামতো এগোতে হবে না আপনাকে। বরং ইন্টারনেটে যেভাবে কোনো তথ্য খুঁজে দেখি আমরা, ঠিক সেভাবেই নিজেদের ইচ্ছেমতো আর্টিকেলে চলে যেতে পারবেন। এমনকি উইকিপিডিয়ার মতোই এখানে পাঠক চাইলে নিজের মতো তথ্য যোগ করতেও পারবেন। তবে সেই তথ্য মিলিয়ে দেখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শুধু যে একটি হত্যাকাণ্ডের কথাই রয়েছে, তাও অবশ্য নয়। সেইসঙ্গে রয়েছে একটি মহামারীর কথা। কারিয়াপ্পা-ম্যুরেন নামের এক মারন রোগে আক্রান্ত সারা পৃথিবীর মানুষ। আর এই রোগটির কথা যিনি প্রথম জানান, তিনি স্নায়ুবিজ্ঞানী কনি ম্যুরেন। খেলার নাম থেকেই বোঝা যায়, স্নায়ুবিজ্ঞানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এই রহস্যের। তবে সেই সম্পর্কের হদিশ পেতে গেলে খেলায় নামতে হবে আপনাকে।

২০১৬ সালে বেলজিয়ামের লেখক জোয়ানের ট্রুয়েন্স প্রথম এমন একটি উত্তরাধুনিক উপন্যাসের পরিকল্পনা করেছিলেন। এর জন্য তাঁকে গেম ডিজাইনিং, আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স, ডেটা সায়েন্সের মতো বিষয়ও শিখতে হয়েছে। ৩ বছর ধরে এই সমস্ত বিষয় রপ্ত করার পর অবশেষে ২০১৯ সালে আরেক লেখক মাতেই সাঙ্কার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনি। তার পরেও ২ বছর ধরে চলেছে এক একটি আর্টকেল লেখার কাজ। আর প্রতিটা আর্টিকেলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ছবি এঁকেছে শিল্পী ডিউক অ্যালিস। এভাবেই একটু একটু করে সেজে উঠেছে ওমনিপিডিয়া। আসলে ট্রুয়েন্স প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, ইন্টারনেটের জগতে মানুষ নিজেকে যতই স্বাধীন মনে করুক, তার সমস্ত তথ্য আসলে নিয়ন্ত্রিত। ঠিক যেমন ওমনিপেডিয়ার তথ্যের ভিড়ের মধ্যেও প্রতিটা মানুষ আসলে একটাই গল্প পড়বেন। যে গল্প তাঁকে লেখক পড়াতে চাইছেন।

এই মৌলিক বিষয়টির সঙ্গে অপরাধপ্রবণতা, পরিবেশ সমস্যা এবং অর্থনৈতিক শোষণের মতো সমসাময়িক ঘটনাগুলিকেও জড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। কার্যত আরও নানাকিছুই জড়িয়ে নিতে হয়েছে। কারণ কাল্পনিক হলেও আসলে এক বিশ্বকোষই তো রচনা করতে হয়েছে। তবে বর্তমান সময় থেকে প্রযুক্তির উন্নতির মধ্যে দিয়ে আমরা আসলে কোন অন্ধকার সময়ের দিকে এগিয়ে চলেছি, তা বুঝিয়ে দেওয়াই লক্ষ লেখকের। ১৪ জুলাই প্রকাশ পেয়েছে নিউরোক্রেসি। আর এই ২ মাসের মধ্যেই ইউরোপ ও আমেরিকার নানা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে খেলাটি। অনেকেই খেলাটি শেষ করেছেন। কিন্তু তাঁরাও গোটাটায় এমনই মুগ্ধ, কেউই আগে থেকে বাকিদের কিছু জানিয়ে দিতে চান না। বরং মানুষ নিজের মতো করেই খুঁজে দেখুক তার ভবিষ্যতকে।

Powered by Froala Editor