পর্যটনের মরশুম ফুরোলেই বর্জ্য সংগ্রহ করতে হিমালয়ে ছোটেন এই পরিবেশবিদ!

শীতকাল পড়লেই বায়ুদূষণের জেরে সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নেয় দিল্লি। দেশের দূষিততম শহরের তালিকায় রয়েছে কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই-এর মতো শহরের নামও। তা নিয়ে চর্চাও চলে বছরভর। তবে এই আলোচনায় ব্রাত্য থেকে যায় হিমালয়ের পরিস্থিতি। তুষার নয়, বরং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ক্রমাগত প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্যের (Non-biodegradable Wastes) পাহাড় হয়ে উঠছে। এমনটাই দাবি হরিয়ানার পরিবেশবিদ প্রদীপ সাঙ্গোয়ানের (Pradeep Sangwan)। 

কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তরাখণ্ড, হিমাচল কিংবা সিকিম— প্রান্তিক পার্বত্য অঞ্চলের বসবাস করা মানুষদের জীবিকার অন্যতম উৎস পর্যটন। বিগত কয়েক বছরে ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো উন্নত হওয়ায়, স্থানীয়দের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধিই যেন আশীর্বাদ হতে গিয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। আর তার কারণ প্লাস্টিক ও অন্যান্য অজৈব বর্জ্যের বাড়বাড়ন্ত। 

একদিকে যেমন পার্বত্য অঞ্চলের দৃষ্টি নান্দনিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বর্জ্যের এই পাহাড়, তেমনই প্রকৃতিতে প্রভাব পড়ছে তার। প্লাস্টিকজাত পাহাড়ি মাটি আটকে যাওয়ায় বন্যা কিংবা ধ্বসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমশ। স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাস্তুতন্ত্রেও। পরিস্থিতি এই পথে চলতে থাকলে আগামীতে পর্যটনশিল্পও দুর্দিনের সম্মুখীন হবে বলেই অভিমত সাঙ্গোয়ানের। আর এই ঘটনার জন্য তিনি দায়ী করছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পরিকল্পনার অভাবকেই। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাই নিজেই মাঠে নেমেছেন হরিয়ানার বাসিন্দা। হিমালয়ের ট্রেকিং রুটগুলিতে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা ও নন-বায়োডিগ্রেডেবল বর্জ্য সংগ্রহই হয়ে উঠেছে তাঁর রুটিন। এই যাত্রাপথের শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। সাঙ্গোয়ান নিজে একজন ট্রেকার। সেইসঙ্গে পাহাড়প্রেমী আরও বেশ কয়েকজন বন্ধুদের নিয়েই তৈরি করেছিলেন ‘হিলিং হিমালয়’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। ক্রমে বেড়েছে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা। 

সাধারণত ফেব্রুয়ারির পর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকে হিমালয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে ট্রেকিং করতে আসেন পর্যটকরা। পর্যটনের মরশুম ফুরোলে মাঠে নামেন সাঙ্গোয়ানরা। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পাড়ি দেন জনপ্রিয় ট্রেকিং রুটগুলিতে। সংগ্রহ করেন প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা। পরিসংখ্যান বলছে প্রতিদিন প্রায় দেড় টন নন-বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন এই সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা। 

একটা সময় এইসকল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য তা পাঠানো হত দূরবর্তী শহরে। তবে বর্তমানে পুহ, কুল্লু, স্পিতি, নারকান্দার মতো পার্বত্য অঞ্চলে তাঁরা গড়ে তুলেছেন একাধিক স্টোরেজ ফেসিলিট। বর্জ্য পদার্থ প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করে এনে সেখানেই রাখা হয়। তারপর চলে বাছাই। পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য তুলে দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের হাতে। প্রক্রিয়াকরণের জন্য নিচে পাঠানো হয় অন্যান্য বর্জ্য।

সাঙ্গোয়ানের অভিমত, জরুরি ভিত্তিতেই হিয়ামলয়ের পার্বত্য অঞ্চলে একাধিক স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে সরকারের। তা না হলেও, আগামীদিনে হিমালয়ের পরিস্থিতি বদলানো অসম্ভব…

Powered by Froala Editor