সৌরশক্তি চালিত বিমানে বিশ্বজয়, কপ-২৭ নিয়ে ক্ষোভ পরিবেশবিদ পিকার্ডের

সুইস এক্সপ্লোলার পরিবারে জন্ম হলেও, ব্যবসাকে জীবনধারণের রাস্তা হিসাবে বেছে নেননি তিনি। বরং, পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন মনোবিদ। একইসঙ্গে তাঁকে চিরকালই টেনেছে প্রকৃতি। পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নানাভাবে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কখনও হট এয়ার বেলুনে চেপে বিশ্বভ্রমণ, কখনও আবার গোটা দুনিয়া প্রদক্ষিণ করেছেন নিজের তৈরি সৌরশক্তি চালিত বিমানে (Solar Plane) চেপে। 

বারট্র্যান্ড পিকার্ড (Bertrend Piccard)। চলতি বছর কপ-২৭ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন কিংবদন্তি পরিবেশবিদ। তবে এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব একটা খুশি নন তিনি। এমনকি রাষ্ট্রনেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগও তুললেন তিনি। ডিকার্বনাইজেশন এবং গ্রিন এনার্জির ব্যবহারকে ব্যয়বহুল-এর তকমা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন রাষ্ট্রনেতারা। এমনটাই অভিযোগ তাঁর।

২০০৩ সালে বিশ্বের প্রথম সৌরশক্তি চালিত বিমান তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন পিকার্ড। খুব একটা সহজ ছিল না কাজটা। বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদদের থেকে পরামর্শ নিয়ে দীর্ঘ চার বছর ধরে তৈরি হয়েছিল বিমানের নকশা। তারপর ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় সেই বিমান তৈরির প্রক্রিয়া। ২০০৯ সালে উড়ান দেয় তাঁর তৈরি এই বিমান। লক্ষ্য ছিল, জীবাশ্ম জ্বালানিহীন এই বিমানে চেপেই বিশ্বভ্রমণ করা। তবে সে-সময় অনেকেই স্রেফ পাগলামি বলে অভিহিত করেন তাঁর এই কর্মকাণ্ডকে। সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই বিমানের কার্যকারিতা নিয়ে। 

আশ্চর্যের বিষয় হল, সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে নজির গড়েছিল সোলার ইম্পালস খ্যাত তাঁর এই বিমান। ২০১৫ সালে আরও একটি সৌরশক্তি চালিত বিমান নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করেন পিকার্ড। তবে সেবার একা ছিলেন না। জুটি বেঁধেছিলেন আরেক পরিবেশবিদ আন্দ্রে বরশবার্গ। দ্বিতীয় বিশ্বভ্রমণে তাঁর লক্ষ্য ছিল মূলত দক্ষিণ এশিয়া, আমেরিকা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকা ভ্রমণ। সেই সূত্রেই ভারতের আহমেদাবাদ এবং বেনারসে অবতরণ করেছিলেন পিকার্ড। ২০১৬ সালে এই বিশ্বভ্রমণের পর্ব সমাপ্ত হলেও, আজও রীতিমতো ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে রয়েছে তাঁর এই আশ্চর্য প্রতিবাদ।

পিকার্ডের দাবি, সবুজ শক্তির ব্যবহারে অনায়াসে জীবাশ্ম জ্বালানি ও অন্যান্য শক্তির প্রতিস্থাপন সম্ভব তা ব্যক্তিগত স্তরেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন তিনি। তবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে চিরকালই অনাগ্রহী রাজনৈতিক নেতা এবং বড়ো ব্যবসায়ীরা। আর তার জন্য পিকার্ড কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ক্ষমতার লোভকেই। 

পিকার্ডের মতে, সবুজ শক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়লে, গ্যাস ও পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপও অনেকটাই কমে যেত সাধারণের ওপর থেকে। এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রে বদল আনতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্টার্ট আপ কোম্পানিদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো। তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই বদল আসবে পরিস্থিতিতে, বিশ্বাস তাঁর। 

বছর কয়েক আগের কথা। জলবায়ু পরিবর্তন বাগে আনতে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করতে ‘সোলার ইমপালস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা তৈরি করেন পিকার্ড। তাদের ওয়েবসাইটেই সৌরশক্তি চালিত ঘরোয়া যন্ত্রপাতি বিক্রি করে একাধিক সুইস স্টার্টআপ কোম্পানি। রাষ্ট্রনেতাদের আচরণে হতাশ হয়ে, এবার এই উদ্যোগকেই বৈশ্বিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছেন পিকার্ড। অর্থাৎ, কিছুদিনের মধ্যে আরও একটি বড়ো আকারের পরিবেশ আন্দোলন দেখতে চলেছে বিশ্ব, সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন তিনি…

Powered by Froala Editor