সামুদ্রিক আগাছা ও খাদ্য, প্রতিষ্ঠায় লড়াই গোয়ার তরুণীর

স্রোতের সঙ্গে অনেকসময় সমুদ্রতটে ভেসে আসছে সবুজ শৈবাল, সামুদ্রিক ঘাস। যাঁরা সমুদ্রে বেড়াতে গেছেন, তাঁরা অনেকেই পরিচিত এই দৃশ্যের সঙ্গে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যা পরিচিত সামুদ্রিক আগাছা নামে। সমুদ্রতটে সচেতনভাবেই এইসব ‘আবর্জনা’ পাশ কাটিয়ে যাই আমরা। তবে মজার বিষয় হল, এই সামুদ্রিক উদ্ভিদই নাকি প্রোটিন-সহ গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের অন্যতম উৎস। ভারতীয় খাদ্যতালিকায় সি-উইড (Seaweed) বা সামুদ্রিক আগাছা জায়গা পেলে, সমাধান হতে পারে একাধিক সমস্যার। এমনকি বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতিও। 

এই বদল আনতেই লড়াই করে চলেছেন গোয়ার তরুণী গ্যাব্রিয়েলা ডিক্রুজ (Gabriella D'Cruz)। পেশায় গ্যাব্রিয়েলা একজন সামুদ্রিক সংরক্ষণকর্মী। তিনি ‘গুড ওশান’ নামক একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাও বটে। বিগত ১০ বছর ধরে সামুদ্রিক কচ্ছপ, ডলফিন এবং প্রবাল প্রাচীরের সংরক্ষণ কার্যের সঙ্গে যুক্ত তিনি। আর সেই সূত্রেই সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নিয়েও নিয়মিত গবেষণা চালিয়ে যেতে হয় তাঁকে। 

বছর পাঁচেক আগে তাঁর নজর কাড়ে সামুদ্রিক আগাছার বিষয়টি। গ্যাব্রিয়েলা লক্ষ করেন জাপান-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশেই অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্যদ্রব্যে পরিণত হয়েছে সি-উইড বা সামুদ্রিক আগাছা। তবে শুধু যে স্বাদের জন্য এই জনপ্রিয়তা, তেমনটা একেবারেই নয়। সামুদ্রিক আগাছা আয়োডিনের অন্যতম উৎস। কাজেই যাঁরা রক্তচাপের জন্য লবণ খান না, তাঁদের আয়োডিন জোগাতে সক্ষম এই খাদ্যদ্রব্যটি। তাছাড়াও সামুদ্রিক আগাছায় রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, জিঙ্ক, আয়রন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো বহু উপকারী উপাদান। যা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। তাছাড়া অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও সামুদ্রিক আগাছার গুরুত্ব কম নয়। 

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, বিশ্বজুড়ে ক্রমশ সি-উইডের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও, ভারতে এই খাদ্যদ্রব্যের প্রচলন নেই বললেই চলে। আর সেই লক্ষ্যেই ময়দানে নেমেছেন গ্যাব্রিয়েলা। ভারতের পশ্চিম উপকূলে, বিশেষত গোয়ায় সবমিলিয়ে ১৪৫টি প্রজাতির সামুদ্রিক আগাছার বাস। তবে সেগুলি সবই জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। অথচ, কৃত্রিমভাবে সেগুলি চাষ করা হলে বদলে যেতে পারে স্থানীয় মানুষদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। পাশাপাশি সি-উইড উচ্চ কার্বন শোষক হওয়ায়, ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসবে উষ্ণায়নও। 

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতেই লকডাউনের ঠিক আগে তামিলনাড়ুর একদল মহিলাকে নিয়েই তিই গড়ে তোলেন একটি বিশেষ দল। সি-উইড চাষ, সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেন তাঁদের। সেইসঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে এই সুপারফুডের প্রচলনের উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত করেন গোয়া এবং তামিলনাড়ুর একাধিক রেস্তোরাঁকে। সেই সূত্র ধরেই ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে পরিস্থিতি। প্রাথমিকভাবে বিদেশি পর্যটকরাই ছিলেন সি-উইডের মূল ক্রেতা। বর্তমানে দেশের মানুষও মুখের স্বাদবদল করতে হাজির হন এইসকল রেস্তোরাঁয়। আগামীদিনে সি-উইডই ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে ভারতের, এমনটাই বিশ্বাস গ্যাব্রিয়েলার…

Powered by Froala Editor