পিঁপড়ের আক্রমণে বিপর্যস্ত দক্ষিণ ভারতের একাধিক গ্রাম, কতটা বিপজ্জনক এই ইয়েলো ক্রেজি অ্যান্ট?

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘পিঁপড়ে পুরাণ’-এর কথা মনে আছে? দৈত্যাকার পিঁপড়ের সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছিল মানব সভ্যতার— এমনটাই ছিল কল্পবিজ্ঞানের সেই গল্পের প্রেক্ষাপট। এবার যেন সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল বাস্তবে। হ্যাঁ, পিঁপড়ের আক্রমণে দিশেহারা হাজার হাজার মানুষ। তবে এবার আর কোনো কল্পবিজ্ঞানের প্রেক্ষাপট নয়, খোদ দক্ষিণ ভারতের গ্রামেই ঘটল এই অদ্ভুত ঘটনা।

অবশ্য প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পের মতো এই আক্রমণকারীরা দৈত্যাকার নয়, প্রযুক্তিতে মানুষকে টেক্কা দেওয়ার সামর্থ্যও নেই তাদের। আমরা যেমন ছোটো পিঁপড়ে দেখে অভ্যস্ত, আক্রমণকারী এই পিঁপড়ের আকারও ঠিক তেমনই। দৈর্ঘ্য মাত্র ৪ মিলিমিটার। তবে বিষক্রিয়ায় অত্যন্ত নিপুণ তারা। গরু, ছাগল-সহ অন্যান্য গবাদি পশু থেকে শুরু করে হাঁস, মুরগি এমনকি বিষধর সাপকেও অনায়াসেই মেরে ফেলতে পারে এই বিশেষ পিঁপড়ের প্রজাতি। 

ইয়েলো ক্রেজি অ্যান্ট (Yellow Crazy Ants)। অবশ্য বিজ্ঞানীদের কাছে তা পরিচিত অ্যানোপ্লোলেপিস গ্রাসিলিপেস নামে। বাঘ, সিংহ, বিষধর সাপ কিংবা কিলার হোয়েলের পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে ১০০টি ভয়াবহ আক্রমণাত্মক প্রজাতির তালিকাতেই রয়েছে এই বিশেষ প্রজাতিটি। আর এই তালিকা প্রস্তুত করেছে বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞান সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার। কিন্তু আকার-আয়তনে কয়েক লক্ষগুণ বড়ো প্রাণীদের কীভাবে ঘায়েল করছে এই ছোট্ট প্রাণীটি? কেনই বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তারা?

এন্টেমোলজিস্টদের কথায়, এই বিশেষ প্রজাতির কোনো নির্দিষ্ট ডায়েট নেই। প্রায় সমস্ত জীবিত ও জৈব পদার্থকেই খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে ইয়েলো অ্যান্টরা। পাশাপাশি নাম থেকেই অনুমান করা যায়, তাদের গতিবিধিও অনির্দিষ্ট। আকস্মিক কোনো প্রাণীকে দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করে বলেই তাদের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ক্রেজি’ শব্দবন্ধটি।

তবে আমাদের চেনা পিঁপড়ে প্রজাতিগুলির মতো এই পিপড়ে দংশন করে না। বরং, দূর থেকে অনেকটা স্প্রে-এর ভঙ্গিতেই ছুঁড়তে থাকে ফর্মিক অ্যাসিড। কয়েক হাজার পিঁপড়ের ছোঁড়া ফর্মিক অ্যাসিডের বৃষ্টিতে একপ্রকার স্নান হয়ে যায় শিকার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রিয়া শুরু হয় সংশ্লিষ্ট প্রাণীটির ত্বকে। ক্রমশ অবশ হতে থাকে দেহাংশ। পরিণাম মৃত্যু। অনেক সময়, আকারে বড়ো প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচলেও, ভয়াবহ ক্ষত সৃষ্টি হয় তাদের দেহে। 

ঠিক এই ঘটনাই ঘটে চলেছে দক্ষিণ ভারতে। ইয়েলো ক্রেজি অ্যান্টের আক্রমণে যেমন একদিকে মারা যাচ্ছে হাঁস-মুরগি, তেমনই দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে গরু-ছাগল কিংবা শূকরের মতো প্রাণী। দু-একটি বিষাক্ত সাপ এবং বন্য খরগোশের মৃতদেহও আবিষ্কার করেছেন স্থানীয়রা। তাছাড়াও বিপর্যস্ত হচ্ছেন কৃষকরাও। নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমি ফসল। আশঙ্কার বিষয় হল, দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এই বিশেষ পিঁপড়ের প্রজাতি। ফলে, তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি আগামীতে বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলেই আশঙ্কা এন্টেমোলজিস্টদের। রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারেই একমাত্র দমন করা সম্ভব এই ভয়ঙ্কর প্রজাতিটিকে। এখন দেখার বিশেষজ্ঞরা কী সমাধান তুলে দেন সাধারণ মানুষের হাতে…

Powered by Froala Editor