মনে পড়ছিল প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের, বাড়িতেই উলের পুতুল তৈরি করলেন শিক্ষিকা

আজও হয়তো অনেক জায়গাতেই ছোট্ট পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে ভয় পায়। পাঠ্যপুস্তকের নীরস শিক্ষায় অনাগ্রহ দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু মোটের উপর ছবিটা এখন বদলেছে। বদলেছে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্যই। যাঁরা সত্যি করেই পড়ুয়াদের নিয়ে একটি পরিবার তৈরি করতে চান। ঠিক পুতুল খেলার একটি পরিবারের মতো। আর এই করোনার দিনগুলিতে উঠে এল তেমনই এক শিক্ষিকার কাহিনি।

নেদারল্যান্ডের হারলেম শহরের বাভিনক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা মিস ইঙ্গিবর্গ। এই লকডাউন সত্যিই তাঁর কাছে এক দুর্বিষহ সময়। আবার কবে তিনি স্কুলে গিয়ে সেই টেবিলের সামনে বসবেন, জানেন না। তাঁর সামনের ডেস্কে পরিচিত ২৩ জন ক্ষুদে পড়ুয়ার জন্য মনটা অস্থির হয়ে ছিল। আর সেই অস্থিরতা কমাতে ঘরের মধ্যে একটি ক্লাসরুম তৈরি করলেন। সেখানে সেই ২৩ জন পড়ুয়াই উপস্থিত। তবে তাদের প্রত্যেকের শরীর উলের তৈরি।

লকডাউনের একঘেয়ে দিনগুলিতে একদিন ইন্টারনেটে উলের পুতুল তৈরির পদ্ধতি দেখলেন মিস ইঙ্গিবর্গ। আর দেখা মাত্রই সেটা শিখে ফেললেন। তারপর উল দিয়েই বানিয়ে ফেললেন তাঁর অতি প্রিয় পড়ুয়াদের পুতুল। তাদের চেহারা, পোশাক, চুলের রঙ সবই যে নিখুঁতভাবে মনে রেখেছিলেন তিনি। আর তাই প্রতিটি পুতুল তৈরি করতে তাঁর লেগেছে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। আর তারপর সেই পুতুলগুলোর ছবি যখন প্রত্যেক পড়ুয়াকে পাঠান, তখন সেই ছবি থেকে প্রত্যেকেই নিজের পুতুলটি চিনতে পারে। চিনতে পারেন তাদের অভিভাবকরাও।

তবে এর পরে পড়ুয়াদের মধ্যে ছিল একটি প্রশ্ন। প্রত্যেকের মধ্যে মিস ইঙ্গিবর্গ কোথায়? আর এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই আরও ২ ঘণ্টা ধরে নিজের একটি পুতুল তৈরি করেন তিনি। এভাবেই তাঁর অতি প্রিয় ক্লাসরুম খুঁজে পেলেন নিজের ঘরের মধ্যেই। আর এই পুতুল তৈরির কাজ তিনি আগামী প্রতিটি ক্লাসের জন্যই করবেন বলে জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে লকডাউন মিটলেই তাঁর পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেবেন নিজের নিজের পুতুল। অবশ্য অন্য ক্লাসের পড়ুয়ারাও তাঁর কাছে পুতুলের জন্য আবেদন করেছেন। তবে সেই কাজের সময় তাঁর নেই, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মিস ইঙ্গিবর্গ।

পৃথিবীর সমস্ত স্কুলেই যদি ছবিটা এমন হত, তাহলে হয়তো শিক্ষার পরিবেশ অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠত। খেলতে খেলতে পাঠ্যবস্তুর মধ্যে ঢুকে যেতে পারত পড়ুয়ারা। স্কুল তো কেবল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাজের জায়গা নয়, স্কুল যে একটি পরিবার।