মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই জন্ম নিয়েছিল চাঁদ, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী আজ থেকে ৪৫৪.৩ কোটি বছর আগে জন্ম পৃথিবীর। অন্যদিকে একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের (Moon) বয়স ৪৫৩ কোটি বছর। অর্থাৎ, জন্মের প্রায় ১.৩ কোটি বছর পর উপগ্রহ পেয়েছিল পৃথিবী। কিন্তু কীভাবে তৈরি হয়েছিল এই উপগ্রহ? দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গবেষকরা। প্রস্তাবিত হয়েছে একাধিক তত্ত্ব। সুপারকম্পিউটারের সৌজন্যে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি তত্ত্ব সামনে আনলেন গবেষকরা। এই তত্ত্ব জানাচ্ছে, কয়েকশো বছর নয়, বরং মাত্র কয়েক ঘণ্টার (Within Hours) মধ্যেই জন্ম নিয়েছিল চাঁদ। 

পৃথিবী ও থিয়া নামক একটি মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষেই জন্ম চাঁদের। থিয়া নামের এই গ্রহাণুর আয়তন ছিল প্রায় মঙ্গলের সমান। এতদিন পর্যন্ত গবেষকরা মনে করতেন, পৃথিবী ও থিয়া সংঘর্ষে পৃথিবীর খুব কম অংশই ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল বাইরের কক্ষপথে। অর্থাৎ, চাঁদ তৈরিতে অধিকাংশ উপাদানই সরবরাহ করেছে থিয়া (Theia)। 

এই তত্ত্ব নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয় সত্তরের দশক থেকে। কারণ, চাঁদ মূলত থিয়ারই অংশ হলে, সেক্ষেত্রে থিয়ার উপাদানই বেশি থাকার কথা। অথচ, চাঁদের বাইরের পৃষ্ঠের উপাদনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে পৃথিবীর। অনেকে দাবি করেছিলেন, থিয়া ও পৃথিবীর আইসোটোপিক গঠন ছিল একই ধরনের। তবে বাস্তবের নিরিখে দেখতে গেলে সেই সম্ভাবনাও প্রায় শূন্য বললেই চলে। 

এই সমস্যার সমাধানের করতে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটেশনাল কসমোলজির গবেষকরা হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন সুপারকম্পিউটার সিম্যুলেশনকে। পৃথিবী ও থিয়ার ভর, আবর্তন বেগ, ঘূর্ণন গতি এবং গঠনগত উপাদানের পরিমাণের মতো রাশিগুলির বিভিন্ন মান নিয়ে, সুইফট ওপেন-সোর্স কোডে তৈরি করা হয়েছিল কয়েক কোটি সিম্যুলেশন। মিলিয়ে দেখা হয়েছিল এই সংঘর্ষগুলির ফলে তৈরি উপগ্রহের সঙ্গে মধ্যে আদৌ চাঁদের বর্তমান ভর ও পৃথিবী থেকে দূরত্বের মিল রয়েছে কিনা। 

এর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মডেলটি জানাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মহাজাগতিক সংঘর্ষে থিয়াকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছিল লোহিততপ্ত পৃথিবী। অন্যদিকে পৃথিবীর একটি টুকরো ছিটকে বাইরে চলে যায়। সেটিই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চাঁদের রূপ নেয়। সম্প্রতি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা। সেই সঙ্গে নাসাও সংশ্লিষ্ট সিম্যুলেশনের ভিডিও প্রকাশ করেছে তাদের অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে। সুপারকম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি এই নতুন সিম্যুলেশন জ্যোতির্বিদ্যার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বলেই অভিমত অধিকাংশ বিজ্ঞানীর…

Powered by Froala Editor

More From Author See More