পৃথিবী বুকে প্রকাণ্ড সব 'চিত্রকলা', দেখে নিন বিস্ময়কর কিছু জিওগ্লিফস

/১১

বিশাল এলাকাজুড়ে মাটির ওপর খোদাই করা হয়েছে এক প্রকাণ্ড চিত্রকর্ম। কখনও তা কোনো পশু-পাখির ছবি। আবার কখনও নিছকই কোনো জ্যামিতিক চিত্র। তবে তাদের আয়তন এতটাই বড়ো খালি চোখে ধরা পড়ার জো নেই কোনো। আকাশপথে বিমান থেকে কিংবা উঁচু কোনো টাওয়ার থেকে দেখলে তবেই বোঝা যায় এইসব ‘অতিমানবিক’ চিত্রকলাদের। প্রত্নতত্ত্বের পরিভাষায় যাকে বলে ‘জিওগ্লিফস’।

/১১

সপ্তম আশ্চর্যের বাইরেও গোটা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এমনই অসংখ্য জিওগ্লিফস। যারা কোনো অংশে কম বিস্ময়কর নয়। কে বা কারা এই অতিমানবিক ছবিগুলির নির্মাতা— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্টভাবে তা জানা যায়নি আজও। কীভাবেই বা নির্মিত হল এইসব চিত্র— তাও একপ্রকার রহস্যই। দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু জিওগ্লিফসের ছবি।

/১১

আফিংটন হোয়াইট হর্স— ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের কাছেই আফিংটন গলফের মাঠের মধ্যেই জেগে রয়েছে এই প্রকাণ্ড জিওগ্লিফস। দেখতে ঠিক যেন, লাফ দেওয়া সাদা ঘোড়া। আর সেখান থেকেই এমন নাম এই চিত্রকলার। আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে চুনাপাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল এই জিওগ্লিফস। ব্রোঞ্জ যুগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে দেওয়া হয় এই চিত্র।

/১১

আতাকামা জায়েন্ট— বলার অপেক্ষা থাকে না এই চিত্র লুকিয়ে রয়েছে চিলির আতাকামার ধূসর মরুপ্রান্তরে। এই বিশাল দৈত্যের ছবি বিশ্বের বৃহত্তম অ্যানথ্রোপোমরফিক জিওগ্লিফস। ১০০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আঁকা হয়েছিল এই প্রকাণ্ড ছবি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেতে প্রাচীন মানুষরা ব্যবহার করতেন এই ছবিটিকে।

/১১

ভিরাকোচার ত্রিশূল— পেরুর ইনকা সভ্যতায় পূজিত হতেন ভিরাকোচা। তিনি মূলত সূর্য এবং বজ্রপাতের দেবতা। আর তাঁর হাতে থাকত প্রকাণ্ড এক ত্রিশূল বা ট্রাইডেন্ট। পেরুর পিকসো মরুভূমিতে এমনই একটি ট্রাইডেন্টের ছবি দেখতে পাওয়া যায় আজও। যায় দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮১ মিটার। হ্যাঁ, ইনকা সভ্যতার মানুষরাই এই ছবি বানিয়েছিলেন ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।

/১১

সাজামা লাইন— এবার গন্তব্য বলিভিয়া। বলিভিয়ার সাজামা অঞ্চলের ফাঁকা মাঠের ওপর দিয়ে হাঁটলে চোখে পড়বে অসংখ্য সংকীর্ণ-প্রশস্ত নালা। কখনও তার প্রস্থ ৩ ফুট, কখনও আবার ১০ ফুট। তবে আকাশপথ থেকে দেখলেই বোঝা যাবে আদতে সেগুলি কোনো নালা নয়। বরং, তা জ্যামিতিক চিত্র। এই ধরনের এক একটি রেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ মাইল পর্যন্ত। সব মিলিয়ে গোটা চিত্রকর্মটির দৈর্ধ্য ১০ হাজার মাইল। আজ থেকে ৩০০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল সাজামা লাইন।

/১১

নাজকা লাইন— সাজামা লাইনের অনুরূপ চিত্রকলার দেখা মেলে পেরুর নাজকাতেও। তবে সেখানে শুধু জ্যামিতিক ছবিই নয়। প্রকাণ্ড প্রাণী, পাখি কিংবা উদ্ভিদের ছবিও চোখে পড়ে হামেশাই। আজ থেকে ২০০০ বছর আগে এইসব জিওগ্লিফস তৈরি হলেও, তা আবিষ্কৃত হয়েছিল বিশ শতকের গোড়ার দিকে। এই অঞ্চলে বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার পর। বর্তমানে ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের তকমাও লেগেছে নাজকা জিওগ্লিফসের গায়ে।

/১১

মারিম্যান— দুই হাত দু’দিকে প্রশস্ত। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকাণ্ড এক মানব অবয়ব। কোলানানের অস্ট্রেলিয়ান মালভূমির পাথুরে জমির ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে এমনই এক চিত্রকর্ম তথা জিওগ্লিফস। যার দৈর্ঘ্য ২.৬ মাইল। মারিম্যান খ্যাত এই চিত্রকর্মটি এতই প্রকাণ্ড, যে তা মানুষের চোখে ধরা দেয় ১৯৯৮ সালে। কবে, কারা তৈরি করেছিল এই জিওগ্লিফস— তা আজও অজানা। কেননা, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আদৌ কোনো প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা ছিল কিনা সন্দেহ রয়েছে গবেষকদের মনেও। কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের ধারণা, এই ছবির নির্মাতা ভিনগ্রহীরা।

/১১

আব্বাস জায়েন্ট— মারিম্যানের মতো আব্বাস জায়েন্টও এক প্রকাণ্ড মানবচিত্র। তফাৎ বলতে শুধু তার হাতে ধরে থাকা প্রকাণ্ড এক মুগুর। ইংল্যান্ডের ডরসেটের তৃণভূমিতে পরিখা কেটে বানানো হয়েছিল এই প্রাচীন দেবতার ছবি। আজ থেকে ১০০০ বছর আগে ইংল্যান্ডের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষরা তৈরি করেছিলেন ১৪০ মিটার দীর্ঘ এই জিওগ্লিফস।

১০/১১

দ্য লং ম্যান— ব্রিটেনেরই সাসেক্সের নিকটবর্তী উইলমিংটনে দেখা মেলে এই প্রকাণ্ড জিওগ্লিফসের। ঠিক দুই হাতে দুটি লাঠি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কোনো মানুষ। অনেকটা রণপা-র মতোই। সবুজ ঘাসের এই ছবি ফুটে ওঠায় স্থানীয়দের কাছে ‘গ্রিন ম্যান’ নামেই পরিচিত এই রেখাচিত্র। নিও-পেগান সংস্কৃতির মানুষরা তৈরি করেছিলেন এই প্রকাণ্ড জিওগ্লিফস। কিন্তু কবে, তা জানা যায়নি আজও।

১১/১১

সিনুয়াস লাইন— না, বিদেশ নয়। ভারতের থর মরুভূমির বুকেই লুকিয়ে রয়েছে এমনই একটি বিস্ময়কর জিওগ্লিফস। অসংখ্য সর্পিল রেখার সমাহার সিনুয়াস লাইনকে একটি জটিল জ্যামিতিক চিত্রের আকার দেয়। ৫১ একর অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই চিত্রকর্মের মোট দৈর্ধ্য প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। প্রতিটি লাইনের গভীরতা প্রায় ১ থেকে ২ ফুট। গবেষকদের মতে সাম্প্রতিক সময়ে, অন্তত ১৫০ বছর আগে তৈরি হয়েছে এই জিওগ্লিফস। কিন্তু কেন এমন চিত্রকর্ম আঁকা কিংবা তা কারা কী কাজে ব্যবহার করতেন, তা আজও অধরা। থরের মতো মরুপ্রধান অঞ্চলে, যেখানে প্রতিনিয়ত ধূলিঝড় বালির আস্তরণে ঢেকে দেয় সবকিছু— এমন জায়গায় কীভাবে দেড়শো বছর বেঁচে রয়েছে এই ছবি, তা রহস্যই।

Powered by Froala Editor