সাহিত্য অকাদেমির সর্বোচ্চ সম্মান, 'ফেলো' নির্বাচিত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

ছোটোবেলায় ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, ‘পাতালঘর’, ‘বটুকবুড়োর চশমা’ পড়তে পড়তে তাঁর লেখনীর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। একটু বড়ো হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বাদ পাই ‘যাও পাখি’ বা ‘লাল নীল মানুষ’-এর মতো লেখার। আর তারপর পরিচয় হয় ‘ঘুণপোকা’, ‘দূরবীন’ অথবা ‘পারাপার’-এর মতো উপন্যাসের সঙ্গে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের (Shirshendu Mukhopadhyay) লেখার সঙ্গে সঙ্গেই আজকের তরুণ প্রজন্মের বড়ো হয়ে ওঠা। আর সেই বাঙালি সাহিত্যিককেই এবার বিরল সম্মানে ভূষিত করতে চলেছে ‘সাহিত্য অকাদেমি’ (Sahitya Akademi)। আজ তাঁকে সংস্থার ফেলো হিসাবে নির্বাচিত করা হল। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই এই সম্মান দেওয়া হল আরও ৭টি ভাষার ৭ জন কিংবদন্তি সাহিত্যিককে।

১৯৩৫ সালে ময়মনসিংহে জন্ম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সেই কাজে ইস্তফা দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে যোগ দেন। এই সময়েই ১৯৫৯ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ছোটোগল্প ‘জলতরঙ্গ’। প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’-ও প্রকাশিত হয়েছিল দেশ পত্রিকার পুজো সংখ্যায়। তারপর একে একে অসংখ্য গল্প উপন্যাস লিখতে থাকেন তিনি। সমকালীন সময়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ই ছিলেন শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ। আবার একইভাবে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতাও ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর লেখায়। ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনার কাজও করেছেন দীর্ঘদিন।

১৯৮৯ সালে ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এর আগেই ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার। দুবার আনন্দ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয় তাঁকে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল নতুন একটি পালক। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পর আবারও বাংলা ভাষার একজন সাহিত্যিক সাহিত্য অকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হলেন। সাহিত্য অকাদেমির তরফে এটিই একজন সাহিত্যিকের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান। এর ফলে আজীবন তিনি সংস্থার সদস্য থাকবেন। শীর্ষেন্দুর সঙ্গে একই তালিকায় নাম রয়েছে ইংরেজি সাহিত্যে রাসকিন বন্ড, হিন্দি সাহিত্যে বিনোদ কুমার শুক্লা, মারাঠি সাহিত্যের বালচন্দ্র নেমেডের মতো সাহিত্যিকের। বাঙালির প্রিয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আজ থেকে সারা ভারতের সাহিত্যের অন্যতম মুখ হয়ে উঠলেন।

Powered by Froala Editor