সাহানার পৈতৃক বাড়িই এখন হোম-স্টে, ভ্রমণপ্রেমী বাঙালির অপেক্ষায় ‘করতোয়া’

সবুজ গাছগাছালি শামিয়ানা বিছিয়েছে মাথার ওপর। পাখির কলতানে ভরে যাচ্ছে চারপাশ। কিছু দূরেই লাল মাটির পথ এঁকেবেঁকে মিলিয়ে গেছে সোনাঝুরির বনে। এর মধ্যেই ছোট্ট এক টুকরো বাড়ি। তার অন্দরমহলে পরতে পরতে লুকিয়ে আছে সাবেকিয়ানার ছাপ। নস্টালজিয়ার ঘ্রাণ। বিশ্বভারতী থেকে হাঁটাপথে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্ব। খোয়াই কিংবা সোনাঝুরির হাট— সেও নাগালের মধ্যেই। এবার চাইলে নিরিবিলি এই শান্তির নীড়ে দিন কয়েক কাটিয়ে আসতে পারবেন আপনিও। 

সাহানা বাজপেয়ী (Sahana Bajpaie)। আলাদা করে তাঁর পরিচয় দেওয়া খানিকটা বাতুলতাই বটে। হ্যাঁ, যে বাড়ির কথা হচ্ছে, সেই বাড়িতেই বেড়ে ওঠা সঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক সাহানা বাজপেয়ীর। এমনকি এই বাড়িতেই রেকর্ড হয়েছিল তাঁর প্রথম গানের অ্যালবাম। গবেষণা এবং কর্মসূত্রে স্বামী ও কন্যার সঙ্গে পাকাপাকিভাবে লন্ডনে স্থানান্তরিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু যে বাড়িতে বেড়ে ওঠা তাঁর, যেখানে জড়িয়ে রয়েছে আশৈশবের স্মৃতি— তা নিষ্প্রাণ ফেলে রাখা যায় নাকি? তাই পৈতৃক ভিটেকেই এবার ‘হোম স্টে’-র (Homestay) রূপ দিলেন সঙ্গীতশিল্পী। 


“আমার বন্ধুরা এই বাড়িতে এসে আড্ডা মারত, ফুটবল ম্যাচ দেখত বাবার সঙ্গে। বাবার বন্ধুরাও আসতেন। এখন বাবা-মা কেউ নেই। আমি চাইছিলাম, বাড়িটা একলা না থাকুক। বিদেশে চলে আসার আগে বাড়ির নিচের তলাটা সংস্কার করি। বাবা-মা যা যা আসবাবপত্র রেখে গিয়েছিলেন, সে-সব একইরকম রেখেছি”, বলছিলেন সাহানা। 


‘করতোয়া’ (Karatoya)— শান্তিনিকেতনের (Shantiniketan) রতনপল্লীর এই বাড়ির বয়স পেরিয়েছে সত্তরের কোঠা। লাল মেঝে, বেতের চেয়ার, সাবেকি ল্যাম্পশেড, খোলা বারান্দা— এসব কিছুতেই আন্দাজ করা যাবে তার বয়স। খুঁজে পাওয়া যাবে অতীতের গন্ধ। পাশাপাশি এই নস্টালজিয়ার সঙ্গ দেবে আলমারিতে সাজানো থরে থরে বইপত্তর। সাহানা জানালেন, “মা জানতেন, আমার ঠাকুরঘর মানেই পড়াশোনার ঘর, গান গাওয়ার ঘর। চিঠিতে লিখেও গিয়েছিলেন আমি যেন মায়ের ঠাকুরঘরটা স্টাডিরুম বানিয়ে নিই। আমার নিজের, বাবার রেখে যাওয়া বহু বইপত্র আছে সেখানে।”

যত্নে গড়ে তোলা এই সাধনার মন্দিরে যাতে প্রাণহীন হয়ে না পড়ে থাকে, সে-কারণেই তা হোম স্টে-তে বদলে ফেলেছেন সাহানা। চাইছেন সমচিন্তক মানুষরা আবার প্রাণ ফিরিয়ে আনুক এই বাড়ির। না-ই বা থালল কোনো স্থায়ী বাসিন্দা, দু-তিন দিনের অতিথিরাও ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতে পারে এই শান্তির নীড়কে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor

More From Author See More