শুকিয়ে যাচ্ছে সমস্ত জলাধার, জলসংকটের শিকার কোলহাপুর সংলগ্ন ১৬০০টি গ্রাম

মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) কোলহাপুর শহর। পঞ্চগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর থেকে সমুদ্রতটের দূরত্ব বড়োজোর ১৫০ কিলোমিটার। অথচ, তা সত্ত্বেও সেখানে ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে জল সংকট (Water Crisis)। শুকিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জলাধার। শুধু কোলহাপুরই নয়, কোলহাপুর সংলগ্ন পশ্চিম মহারাষ্ট্রের প্রায় ১৬০০টিরও বেশি ছোটো-বড়ো গ্রামের ছবি একইরকম। পানীয় জলই হোক কিংবা সেচ— সব জায়গাতেই হাহাকার মিষ্টি জলের জন্য। প্রশ্ন থেকে যায়, নদী এবং সমুদ্র সংলগ্ন অঞ্চল হওয়ার পরেও কেন তীব্র জলসংকট থাবা বসাল এই অঞ্চলে?

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোলহাপুর, সাতারা এবং সাংলি— মহারাষ্ট্রের মূলত এই তিন জেলাতেই বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধারাবাহিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে জলসংকট। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ওয়াটার ইয়ারবুক অফ মহারাষ্ট্র’-এ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এইসকল জেলায় প্রায় মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে কূপের জলস্তর কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। আর তার অন্যতম কারণ হল নগরায়ন। 

কোলহাপুর তো বটেই, সাতারা এবং সাংলি জেলাতেও বিগত দেড়-দু’দশকে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে কল-কারখানা এবং শিল্পের পরিমাণ। শিল্পাঞ্চলে কাজের খোঁজে এসে নতুন করে বসতি স্থাপন করছেন হাজার হাজার মানুষ। ফলে, ক্রমশ কংক্রিটের মোড়কে ঢেকে যাচ্ছে গোটা অঞ্চলটি। কারখানার পণ্য উৎপাদনের জন্য যেমন যদৃচ্ছভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল, তেমনই প্রায় অধিকাংশ বাড়িতেই স্থাপিত হয়েছে বোরওয়েল। অথচ, গোটা শহর কংক্রিটে ঢেকে যাওয়ার ফলে, বৃষ্টির জল ভরিয়ে তুলতে পারছে না ক্রমশ নিঃশেষিত হতে থাকা ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারকে। 

মহারাষ্ট্রের এই জলসংকটের শিকার হচ্ছেন মূলত সমাজের নিচের তলার দরিদ্র মানুষরা। এতদিন মূলত কুয়ো বা কূপের জলই ব্যবহার করতেন তাঁরা। অথচ, বিগত দু’দশকে কুয়োর গভীরতা ৩০ থেকে ৬০ ফুট করা হলেও, জল নেই সেখানে। এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে জলবায়ু পরিবর্তন। প্রতিবছর প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিপাতের সময় খানিকটা হলেও ভরে যেত কুয়ো, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়গুলি। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দেরিতে বর্ষার আগমন এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, আরও বেড়েছে জলসংকট। কৃষ্ণা নদীর জলস্তরও নিম্নমুখী। শুকিয়েছে কৃষ্ণার অন্যান্য শাখানদী, উপনদীগুলিও। অন্যদিকে টেম্বু, তস্করি, মহিসাল নদীর ওপর বড়ো বড়ো বাঁধ তৈরির ফলে কমেছে নদীগুলির পূর্বপ্রবাহ-ও। 

অবশ্য শুধু পানীয় কিংবা দৈনন্দিনের ব্যবহারিক জলই নয়, জলসংকটের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে চাষাবাদও। সাংলি জেলার সেচ দফতর কৃষিক্ষেত্রে সেচের জন্য নদী থেকে জল উত্তোলনের উপর জারি করেছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও। সবমিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতি দক্ষিণ মহারাষ্ট্রের তিন জেলায়। নিজেদের বাড়ি-ঘর, কৃষিজমি ছেড়ে অনেকেই বিকল্পের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছেন অন্যত্র। সেটাই কি ভবিতব্য হয়ে উঠবে ১৬০০টি গ্রামের সমস্ত মানুষদের? পরিত্যক্ত হয়ে উঠবে গোটা অঞ্চল? এই সমস্যার সমাধান কী? বর্তমানে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে ট্যাঙ্কের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এই প্রকল্প যে স্থায়ী সমাধান এনে দেবে না এই সমস্যার, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। 

Powered by Froala Editor