পিছিয়ে থেকেও অবিশ্বাস্য জয়, ফাইনালে পৌঁছে সোনার স্বপ্ন রবির

/৭

সেমিফাইনালের শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ছিলেন রবি কুমার দহিয়া। পরপর ৪ বার তাঁর পা ধরে উলটে মাটিতে আছড়ে ফেললেন কাজাকিস্তানের কুস্তিবীর নুরইসলাম সানায়েভ। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় নুরইসলাম ৯ পয়েন্ট তুলে ফেলেছেন। অন্যদিকে রবি কুমারের সঞ্চয় মাত্র ২ পয়েন্ট। আসন্ন ফলাফল কী হতে চলেছে, তা আন্দাজ করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু অলিম্পিক যে অনিশ্চয়তার মঞ্চ। তাই সব সমীকরণ উলটে দিয়ে ফাইনালে উঠলেন রবি কুমারই। পুরুষদের ৫৭ কেজি কুস্তিতে সোনা জেতার লড়াইতে রবি কুমার। সোনা না হলেও ভারতের ভাগ্যে রুপো নিশ্চিত।

/৭

হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এক ভাগচাষী পরিবারে জন্ম রবি কুমারের। দারিদ্র্য তাঁর চিরসঙ্গী। আর কুস্তির আখড়ায় পা রাখাও সেই ছোটো থেকেই। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে দিল্লিতে সতপাল সিং-এর অধীনে অনুশীলন শুরু করেছিলেন রবি কুমার। ছেলের স্বপ্নপূরণের জন্য সমানভাবে লড়াই করে গিয়েছে তাঁর পরিবারও। বাবা রাকেশ দহিয়া চাষের মাঠের হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও রোজ সাইকেলে করে দিল্লিতে দুধ নিয়ে যেতেন। শহরে দুধ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, অথচ দুধ ছাড়া কুস্তি লড়ার মতো শারীরিক জোর পাওয়া যাবে না। তাই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রাম থেকে নিয়মিত দুধ নিয়ে গিয়েছেন রাকেশ।

/৭

অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে রবি কুমার বুঝে গিয়েছিলেন প্রতিটা প্রতিযোগিতায় জিততেই হবে তাঁকে। তাঁর পরাজয় তো শুধু তাঁর একার নয়, তাঁর সঙ্গে সমানে লড়াই করে চলা পরিবারের সকলের। ২০১৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখলেন রবি কুমার। বয়স তখনও ১৮ পেরোয়নি। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জুনিয়র রেস্টলিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধি রবি কুমার। প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেই রুপোজয় তাঁর। এরপর একের পর এক প্রতিযোগিতায় আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

/৭

২০১৮ সালে অনুর্ধ্ব ২৩ চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও রুপোজয় রবি কুমারের। এরপর ২০১৯ সালে প্রথম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পা রাখলেন রবি কুমার। রাউন্ড ১৬-তেই হারিয়ে দিলেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন আরসেন হারুতিউনিয়ানকে। কোয়ার্টারফাইনালে মুখোমুখি হলেন ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ইয়ুকি তাকাহাশির সঙ্গে। রবি কুমার তাঁকেও দুরমুশ করলেন। যদিও ফাইনালে উঠতে পারলেন না। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের জন্য নিয়ে এলেন ব্রোঞ্জ পদক।

/৭

২০২০ এবং ২০২১ সালের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ৫৭ কেজি বিভাগে সোনাজয় রবি কুমারের। টোকিও অলিম্পিকে তাঁর অংশগ্রহণ তাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জীবনের প্রথম অলিম্পিকে কতটা সাফল্য অর্জন করতে পারবেন রবি কুমার? সন্দেহ ছিল অনেকের মধ্যেই। তবে হার না মানাই যাঁর চরিত্র, তিনি যে একের পর এক বাধা টপকে এগিয়ে যাবেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেখতে দেখতে সেমিফাইনালের মঞ্চে রবি কুমার। কিন্তু সেখানেই শুরু হল অঘটন।

/৭

প্রথমে নুরইসলামের কাছে পিছিয়ে পড়লেও ঘুরে দাঁড়াতে সময় নিলেন না রবি কুমার। ৯-২ এর ব্যবধান কমিয়ে আনলেন এক ধাক্কায় ৯-৫-এ। নুরইসলামকে একটি ঘায়ে একেবারে জমির বাইরে বের করে দিলেন রবি কুমার। আচমকা এমন প্রতি-আক্রমণে স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন নুরইসলাম। এরপর তাঁকে আর পুরনো ছন্দে ফিরে আসার সুযোগ দিলেন না রবি কুমার। একের পর এক আঘাতে প্রথমে ব্যবধান মুছে দিলেন। খেলার শেষে ২ পয়েন্টে এগিয়ে গেলেন রবি কুমার।

/৭

সোনার লড়াই এখনও বাকি। সেখানেও যদি রবি কুমার জয়ী হন, তাহলে অলিম্পিকের আসরে প্রথম কুস্তিতে সোনা পাবে ভারত। আর তা না হলেও, ২০১২ সালের পর দ্বিতীয়বারের জন্য কুস্তিতে রুপোজয় ভারতের। কুস্তিতে ভারতের পদকের সংখ্যা এখনও অবধি ৪। পঞ্চম পদকটির দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন সকলেই। এবারের অলিম্পিক যেন সত্যিই এক অনিশ্চয়তার আসর। আর সেখানেই বারবার অঘটন ঘটাচ্ছেন ভারতের খেলোয়াড়রা।

Powered by Froala Editor

More From Author See More