দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবে ইঁদুর!

প্রকৃতির রোষানলের সামনে মানুষ যে কত অসহায়, তা টের পাওয়া যায় ভূমিকম্প কিংবা বন্যার সময়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের কাছে সাহায্য পৌঁছানো তো দূরের কথা, তাঁদেরকে চিহ্নিত করাই দুরূহ হয়ে ওঠে উদ্ধারকারীদের পক্ষে। তবে অন্যান্য প্রাণীরা একদিকে যেমন আগে থেকেই এইসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ টের পেয়ে যায়, তেমনই এর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতাও আছে এদের। এবার সেই ক্ষমতাই উদ্ধারের কাজে ব্যবহৃত হতে চলেছে।

আশ্চর্য এই প্রকল্পের নেপথ্যে রয়েছেন বেলজিয়ামের অলাভজনক সংখ্যা ‘অ্যাপোপো’-র (Apopo) বিজ্ঞানীরা। উদ্ধারকার্যের জন্যও তাঁরা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন একদল ইঁদুরকে (Rats)। শুধু ভূমিকম্পের কিংবা ট্রেন দুর্ঘটনার ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে আহতদের অবস্থান জানানোই নয়, বরং তাঁদের কাছে ত্রাণও পৌঁছে দেবে এই ইঁদুরের দল।

বছর দুয়েক আগের কথা। ইন্টারনেটে সাড়া ফেলে দিয়েছিল ‘মগবা’ নামের একটি ইঁদুর। শতাধিক ল্যান্ডমাইন শনাক্ত করার জন্য পেয়েছিল স্বর্ণপদকও। তাঞ্জানিয়া সেনাবাহিনীর এই ইঁদুরটিকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বেলজিয়ান সংস্থা ‘অ্যাপোপো’। আসলে জায়েন্ট আফ্রিকান র‍্যাট প্রজাতির এই ধরনের ইঁদুরের ঘ্রাণ শক্তি প্রবল। পাশাপাশি কুকুরের থেকে তাদের আয়তন এবং ওজন বহুগুণ কম হওয়ায় খুব সহজেই দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছে যেতে পারে এরা।

২০১০ সালে ইঁদুর প্রশিক্ষণের এই প্রকল্প শুরু করেছিল ‘অ্যাপোপো। বিগত এক দশকে তাঁদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েক হাজার ইঁদুর পরিষেবা দিয়েছে তাঞ্জানিয়া, লিথুয়ানিয়ার মতো দেশে। এই প্রকল্প সফল হওয়ার পরেই ইঁদুরকে উদ্ধারকারী হিসাবে ব্যবহারের চিন্তাভাবনা শুরু করেন গবেষকরা। ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় বিশেষ গবেষণা। তবে শুধু প্রশিক্ষণ দেওয়াই নয়, সঙ্গে আহতদের চিহ্নিত করার জন্যও প্রয়োজন ছিল বিশেষ প্রযুক্তির।

এক্ষেত্রে ‘অ্যাপোপো’-কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আইন্দোভেন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষকরা। মেরিন ডাইভার অর্থাৎ স্কুবা ডাইভিং-এর পোশাকের কাপড় দিয়েই তাঁরা ইঁদুরের জন্য তৈরি করেন বিশেষ পোশাক এবং ব্যাকপ্যাক। এই ব্যাকপ্যাকেই সংযুক্ত থাকবে ক্যামেরা এবং জিপিএস। যার মাধ্যমে সরাসরি দেখতে পাওয়া যাবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ধ্বংসস্তূপের ছবি। জানা যাবে, আটকে থাকা আহতদের অবস্থান। পাশাপাশি ইঁদুরের মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে চকলেট কিংবা বাদামের মতো খাবারও পাঠানো সম্ভব দুর্ঘটনাগ্রস্তদের কাছে।

২০২১ সালে প্রাথমিকভাবে সফল হয় বেলজিয়ান গবেষকদের এই প্রকল্প। তবে গবেষকদের মতে, এখনও প্রয়োজন আছে বিস্তর গবেষণার। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে এবার ট্রায়াল শুরু করতে চলেছেন তাঁরা। যা সফল হলে, বদলে যেতে পারে আগামীদিনের ছবি…

Powered by Froala Editor