ভয়াবহ দাবানলের শিকার গ্রিস, বাস্তুচ্যুত পর্যটক-সহ ১৯ হাজারের বেশি মানুষ

ছোট্ট ইনডোর স্টেডিয়ামের মধ্যেই গাদাগাদি করে শুয়ে রয়েছেন কয়েকশো মানুষ। কেউ ছেড়ে এসেছেন নিজের ঘর-বাড়ি। কেউ আবার নিছকই বেড়াতে এসেছিলেন। অথচ প্রাণ বাঁচাতে ব্যাগ-পত্তর ছেড়েই তাঁদেরও তড়িঘড়ি বেরিয়ে আসতে হয়েছে হোটেল থেকে। কিন্তু দেশে ফিরবেন কীভাবে, জানা নেই কারোরই। বিমান পরিষেবা বন্ধ। ঘুম নেই। খাবার নেই। পানীয় জলের ভাণ্ডারও সীমিত। 

গ্রিসের (Greece) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত দ্বীপশহর রোডস আইল্যান্ড (Rhodes Island)। সমুদ্রের পাশাপাশি ছোটো ছোটো পাহাড়, ঘন অরণ্য— সবমিলিয়ে এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফলে প্রতিবছর গ্রীষ্ম পড়লেই সেখানে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। তবে তাঁদের উচ্ছ্বাসই রাতারাতি বদলে গেছে আর্তনাদে। বিগত কয়েকদিন ধরেই দাউ দাউ করে জ্বলছে গ্রিসের অন্যতম এই পর্যটনকেন্দ্র। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অরণ্যের একাংশ। দাবানলের লেলিহান শিখা ক্রমশ গ্রাস করছে লোকালয়কেও। কয়েক মাইল দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির সেই ভয়াবহ তাণ্ডব। রক্তাব হয়ে রয়েছে রাতের আকাশ। কখনও কখনও আবার মাথার ওপর থেকে ঝরে পড়ছে ছাই। কিন্তু কীভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত?

বিগত কয়েকদিন ধরেই ধারাবাহিক তাপপ্রবাহের শিকার গোটা ইউরোপ। ক্রোয়েশিয়া, স্পেন, ইতালি-সহ ইউরোপের একাধিক দেশেই তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রির সীমা। গ্রিসেও অন্যথা হয়নি তার। গত ২১ তারিখ এই তাপপ্রবাহের কারণেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় গ্রিসে। রোডস আইল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলের তুলনামূলক শুষ্ক অরণ্যেই প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিল দাবানল। তারপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে। 

বিগত বেশ কয়েকদিনের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার মানুষ। তাঁদের মধ্যে অবশ্য অধিকাংশই পর্যটক। সরকারের তৎপরতায় কারোর প্রাণ না-গেলেও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি হোটেল। স্থানীয় মানুষদের ঘর-বাড়ি আদৌ রক্ষা পাবে কিনা এই অগ্নিকাণ্ড থেকে— জানা নেই কারোরই। পর্যটকরাও কীভাবে বাড়ি ফিরবেন, অনিশ্চিত তা-ও। 

রোডসের লার্মা, আস্কলিপি ও লার্ডোস— মূলত এই তিন অঞ্চলেই ভয়াবহ রূপ নিয়ে দাবানল। আগুন নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়েছে বিশেষ বাহিনী। ১৭৩ জন দমকলকর্মী-সহ পাঁচটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে অগ্নিনির্বাপণের জন্য। উদ্ধারকার্য শুরু করেছে কোস্টকার্ড। তাছাড়াও রোডসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে গ্রিসের নৌবাহিনী। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না রোডস থেকে। একইভাবে গতকাল রোডস সংলগ্ন কর্ফু দ্বীপেও শুরু হয়েছে প্রকৃতির তাণ্ডব। কর্ফুতে ব্যাপক আকার না-নিলেও, দাবানলের কারণে সেখান থেকেও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয়দের।

অবশ্য শুধু গ্রিসই নয়। চলতি মাসেই দাবানলের শিকার হয়েছে স্পেন ও ক্রোয়েশিয়াও। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও, নতুন করে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থেকেই গেছে সেখানে। বলার অপেক্ষা থাকে না, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নই এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। আগামীতে এ-ধরনের দাবানলের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে গোটা বিশ্বজুড়ে, সতর্ক করছে রোডস আইল্যান্ডের এই ভয়াবহ ঘটনা।

Powered by Froala Editor