বিশেষভাবে সক্ষমদের পুনর্বাসন, হারানো গ্রাম ফিরিয়ে আনলেন পাদ্রি

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। যুদ্ধের সময় এক সৈন্যের মিসাইলে উড়ে গেছিল চেক প্রজাতন্ত্রের নিয়েরতভ গ্রাম। বার্কিউ চার্চ, বহু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান নিমেষের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছিল মিসাইলের আঘাতে। এত বছর পর, সেই গ্রামকে আবার আগের রূপে ফিরিয়ে দিলেন চার্চের যাজক ফাদার জোসেফ।

ধ্বংস পরবর্তীতে যে-কোনো গ্রামকে পুনরায় আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা খুব সহজ কাজ নয়। অথচ তিলে তিলে কায়িক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এই লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে এই গ্রামে তিনি আসার পর তিনি ঈশ্বরের কাছে গ্রাম ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন। ১৯৮৯ সালস কমিউনিসম শেষ হওয়ার পর, সেই গ্রামে মাত্র দুইজন লোক বসবাস করতেন।

দূরদর্শী জোসেফ স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই গ্রামে নিরাপদে থাকবেন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষেরা। ৪২ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের সময় বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের আটকে রাখা হত লক আপে। সমাজের পক্ষে তাঁরা ক্ষতিকর, এই ভেবে পরিবারের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হত। সমাজে তাদের পাগল, ধ্বংসকারী মানুষ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এই অক্ষমতাকে হাতিয়ার করে ছড়ানো হয়েছিল ভুল তথ্যও।

শুধু মাত্র চার্চটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা নয়, সেখানে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় তিনি গ্রামটিতে সমস্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থাও করেছেন। বর্তমানে জোসেফ ও তাঁর টিমের বদ্যানতায় সেখানে রয়েছে একটি বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, রেস্তোরাঁ, বাজার। এমনকি আড্ডা দেওয়ার জন্য রয়েছে একটি পাবও।

নিয়ারতভের ৮০ শতাংশ মানুষ মানসিক অথবা শারীরিক অক্ষমতার শিকার। কিন্তু সবাই কম বেশি বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিযুক্ত রেখেছেন। এ-মূহূর্তে ২৫০ জন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ গোটা গ্রামে কাজ করেন, যা দেশের বিশেষভাবে সক্ষম কর্মীদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে। রয়েছে একটি মাইক্রোব্রিউইরি, যেখানকার বিয়ার বিক্রি হয় গোটা চেক প্রজাতন্ত্রে।

জোসেফ মনে করেন, গ্রামের মানুষরাই গ্রামের সব। তাঁদের চিন্তাভাবনাই গোটা গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন দিকে। গ্রামের যা কিছু ভালো, তার সবই সেখানকার মানুষদের করা। হারিয়ে যাওয়া গ্রামকে কেবল ফিরিয়েই দেননি ফাদার জোসেফ, স্বপ্ন দেখাতেও শুরু করেছেন তিনিই।