একাকিত্ব গ্রাস করছে ক্রমশই, কবে মুক্তি পাবে শঙ্কর?

দুই দেশের রাজনৈতিক মৈত্রীর স্মারক হিসাবে দেওয়া হয়েছিল আস্ত একটি হাতি। না, মধ্যযুগের রাজারাজরাদের কথা নয়। ১৯৯৮ সালে ভারত সরকারকে ৬ মাসের একটি হাতি উপহার দিয়েছিল জিম্বাবোয়ে সরকার। সেই থেকে দিল্লির চিড়িয়াখানাতেই (Delhi Zoo) রয়েছে শঙ্কর (Shankar)। বয়স এখন ২৪ বছর। হাতিদের বয়সের তুলনায় বেশ কম। কিন্তু এর মধ্যেই শারীরিক ও মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছে তাকে। অবশেষে শঙ্করের মুক্তির দাবি নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন ১৬ বছরের কিশোরী নিকিতা ধাওয়ান। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের নানা পশুপ্রেমী সংগঠন নিকিতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই তাকিয়ে আছেন দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের দিকে।

২৪ বছর আগে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে ভারতে নিয়ে আসা হয় ৬ মাসের হাতির শাবকটিকে। পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার নামে নাম রাখা হয় তার। প্রথমে অবশ্য একা থাকতে হত না তাকে। একটিই ঘেরা চত্বরে তার সঙ্গে থাকত বোম্বাই নামে আরেকটি হাতির শাবক। তবে ২০০৫ সালে শারীরিক অসুস্থতায় প্রাণ হারায় বোম্বাই। তারপর থেকে একাই রয়েছে শঙ্কর।

দিল্লি চিড়িয়াখানায় আরও দুটি হাতি আছে। তবে তাদের সঙ্গেও শঙ্করের কোনো যোগাযোগ নেই। ছোট জায়গায় ঠিকমতো হাঁটার অবকাশও পায় না সে। ফলে শরীর ভেঙে যাচ্ছে দিনদিন। আর স্বজাতির থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় মানসিক অবসাদ তো রয়েছেই। শঙ্করের বাসস্থানের পাশ দিয়েই আবার চলে গিয়েছে রেললাইন। রেলের বাঁশির শব্দে বারবার চমকে ওঠে সে। অথচ এতদিন ধরে এই নিয়ে কোনো হেলদোল নেই দিল্লি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।

এর মধ্যে ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তাতে দেশের সমস্ত চিড়িয়াখানায় হাতি এবং অন্যান্য সামাজিক জীবদের বন্দি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এমনকি ইতিমধ্যে যারা বন্দি হয়ে রয়েছে, তাদের নিরাপদে হাতিদের সমাজে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে একটানা ৬ মাসের বেশি যাতে কেউ একা না থাকে সেদিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তির পরেও শঙ্করের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বছর দুয়েক আগে দিল্লি চিড়িয়াখানায় গিয়ে শঙ্করের অবস্থা দেখেছিলেন নিকিতা। আর তারপর থেকেই শঙ্করের মুক্তির বিষয়ে চেষ্টা শুরু করেন তিনি। এই বয়সেই তিনি তৈরি করে ফেলেছেন ‘ইয়ুথ ফর অ্যানিম্যালস’ নামের একটি সংগঠন। প্রথমে দিল্লি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে শঙ্করের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি জানান নিকিতা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো উত্তর পাননি। এরপর কেন্দ্রের বন্যপ্রাণ মন্ত্রালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি লিখেও উত্তর পাননি তিনি। তাই এবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। নিকিতার দাবি, শঙ্করকে এবার আফ্রিকার জঙ্গলেই ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আর আদালতের অনুমতি পেলে তার সমস্ত ব্যবস্থা তিনি নিজেই করতে রাজি। এই কাজে অনেকগুলি পশুপ্রেমী সংগঠন তাঁকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। অপেক্ষা শুধু আইনি সবুজ সংকেতের।

Powered by Froala Editor