যে অভয়ারণ্যে পাখির কলকাকলি, ত্রস্ত হরিণের সঙ্গে রয়েছেন বিভূতিভূষণও

ইট কাঠের শহুরে জঙ্গলে ভালো লাগে না বেশিদিন। দমদন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় যদি আচমকা খানিকটা সবুজের ঘ্রাণ নেওয়া যেত চোখেমুখে! ইন্টারনেট এসব ক্ষেত্রে বেশ নির্ভরযোগ্য। খোঁজা শুরু করলে, কিছু-না-কিছু পাইয়েই দেয়। কোথায় পাব এবারের 'বাড়ির পাশে আরশিনগর’?

শহরতলির কাছেই এরকম একটা জায়গা বিভূতিভূষণ অভায়ারণ্য। যা পারমাদান নামেও পরিচিত। আমরা যারা পাখির ছবি তুলি, তাদের কাছে এই জায়গার গুরুত্ব আরো বেশি। এখানেই কয়েকদিনের জন্য বাসা বাঁধে বর্ষাকালীন পরিযায়ী সবুজ শুমচা(হুডেড পিট্টা), যা পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাওই প্রায় পাওয়া যায় না। তার আসার খবর পেয়েই একটু সবুজের ছোঁয়া পেতে আর তার সঙ্গে দেখা করতে পাড়ি জমালাম বনগাঁর পারমাদানে...

জঙ্গলে মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সূর্য পাটে বসেছে, আপনি টেরই পাবেন না। কান পাতলেই শুনতে পাবেন নানা পাখির ডাক, চোখে পড়বে প্রজাপতিদের ফুলে ফুলে ওড়াওড়ি। পাখিদের মধ্যে ফটিক জল, হাঁড়িচাচা, কুটুরে প্যাঁচা, কাল প্যাঁচা, রামগাংরা, ঝুঁটি শালিক, নানা প্রজাতির পাপিয়া, নানা প্রজাতির বসন্তবৌরি, কমলা দামা ইত্যাদি নানা জনের সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর সময়।

গেট দিয়ে টিকিট কেটে প্রবেশ করে তারের ফেনসিং-এর পাশ দিয়ে এগোতে থাকলেই মনে হবে কে যেন আপনার দিকে সর্তক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভালো করে লক্ষ্য করলেই তারজালের মধ্যে হরিণদের গতিবিধি ধরা দেবে নজরে। দেখবেন এগাছ থেকে ওগাছ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে হনুমানের দল। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে শিয়াল মহারাজের সঙ্গেও।

এই অরণ্যের পাশ দিয়েই বয়ে চলছে ইছামতী নদী। ক্ষীণাকায় ইছামতীর জলে নৌকায় ভাসতে ভাসতে সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য আপনার স্মৃতির মণিকোঠায় জায়গা করে নিতে বাধ্য। নদীর অন্য পাড়েই নীলকুঠি সাহাবের ভাঙা বাংলো যার প্রতিটা ইঁটে রক্ত দিয়ে চাষিদের যন্ত্রণার ইতিহাস লেখা আছে। সময় থাকলে একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন সেখানেও...

সন্ধ্যে নামল। এবার ফেরার পালা। শহুরে আস্তাকুঁড়ে ফেরার আগে যে সবুজের গন্ধ নাকেমুখে লেগে থাকবে, তা আগামী কিছুদিন আপনাকে বাঁচার রসদ জোগাবে। তারপর না হয় আবার আরশিনগরের খোঁজ করা যাবে...

পথ নির্দেশঃ

শিয়ালদহ-বনগাঁ লোকালে বনগাঁ নেমে অটোতে মতিগঞ্জ। সেখান থেকে আরেকটা অটো নিয়ে পারমাদান। ডিরেক্ট স্টেশান থেকে রিজার্ভ অটোতেও যেতে পারেন।

More From Author See More