পাণ্ডুয়া জয়ের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে মিনার

ধরুন হাওড়া মেন লাইনে ট্রেনে উঠে পড়েছেন। হাতে অনেকখানি সময়ও রয়েছে আপনার। ইতিহাস নিয়ে যথেষ্ট জানার ইচ্ছাও রয়েছে। তাহলে? চোখ বুজে পৌঁছে যান পাণ্ডুয়া। ব্যান্ডেল থেকে মাত্র পাঁচটি স্টেশন। হাওড়া থেকে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের রাস্তা। পায়ে পায়ে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। দেখতে শুনতে সাদামাটা এই মফঃস্বল সমৃদ্ধ করবেই আপনাকে। পাবেন সবুজের ছোঁয়াও। এমন পবিত্র প্রকৃতির মাঝেই জেগে রয়েছে বহু স্থাপত্য, যার কারুর গায়ে ইতিহাস, কারুর গায়ে মুখে মুখে ভেসে ওঠা গল্প। কিছু মিথ, কিছু হার-জিতের ঐতিহ্য আর এক রাজকীয় হাওয়া। নিভে আসা রাজত্বের গায়ে জমির পর জমি চাষ হচ্ছে ফসল।  

হুগলি জেলার এক অন্যতম বিখ্যাত মফঃস্বল পাণ্ডুয়া। কেন বিখ্যাত তার ব্যাখ্যা অবশ্য লাগবে না অনেকেরই। পাণ্ডু রাজাদের রাজত্বের ধ্বংসাবশেষ ও পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত মিনারের কথা শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে এখানে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর সেই ১২৫ ফুটের মিনার আজও এক অন্যতম আশ্চর্য হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেসেখানে। বরী মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত এই মিনার মসজিদ থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে। আকারে গোলাকার এই মিনারের পাঁচটি তলা উপরদিকে ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। ১৮ ফুট ব্যাস থেকে একতলা শুরু হলেও উপরে গিয়ে এটি শেষ হয়েছে ৪.৫ ফুটে। মিনারের ভিতর দিয়ে একটি প্যাঁচানো সিঁড়ি ঘুরে উঠে গেছে মাথা পর্যন্ত। যে সিঁড়ি থেকে প্রত্যেক তলার ধাপে পৌঁছানো যায় একটি করে বারান্দায়। প্রতিটা বারান্দা আসলে তলাগুলির ভিত্তির উপরে তৈরি। এবং প্রবেশপথে পশ্চিমমুখী। জানা যায়, ভিতরের নকশা এক সময় এনামেলের তৈরি ছিল এখানে। মিনারটির বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখে অনেকেই সুলতানি আমলের স্থাপত্য মনে করলেও আসলে এটি তুঘলকীয় স্থাপত্যের ছাপ বহন করে থাকে। এর সদৃশ মুসলিম স্থাপত্য হিসাবে কেবলমাত্র বিদরের চৌবারা স্থাপত্যের তুলনা টানা যায়। জাফর খাঁ গাজী কর্তৃক পাণ্ডুয়া জয়ের স্মৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মিনার। পাণ্ডুয়ায় জিটি রোডের ধারে সেই দরগা এখনও দেখতে পাওয়া যায়। কেবল জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক স্তরের বহু ট্যুরিস্ট এখনও এখানে আসেন ইতিহাসের ছোঁয়া পেতে।