নিউক্লিয় আর্ক রিঅ্যাকটরের কাছে হার মানল সূর্যের তাপমাত্রাও

পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস সূর্য (Sun)। এ কথা ছোটো থেকে সকলেই জানি আমরা। আর সৌরজগতের সবথেকে উষ্ণতম অঞ্চল? এই প্রশ্নের উত্তরটাও একই হওয়ার কথা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? উষ্ণতার নিরিখে এবার সূর্যকেও পিছনে ফেলল অন্য একটি অঞ্চল। আর সৌরজগতের সেই উষ্ণতম অঞ্চল (Hottest Region) লুকিয়ে রয়েছে এই পৃথিবীর বুকেই। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে কয়েক মাইল পথ অতিক্রম করলেই দক্ষিণ ডিডকট শিল্পাঞ্চল। সাধারণ মানুষের বসবাস সেখানে খুব সামান্যই। আর এই ছোট্ট শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত ওয়্যারহাউসেই লুকিয়ে রয়েছে সৌরজগতের সবথেকে উষ্ণতম অঞ্চল। অবশ্য তাকে অঞ্চল না বলে প্রকোষ্ঠ বলাই ভালো। হ্যাঁ, এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটেই গবেষকরা তৈরি করলেন কৃত্রিম সূর্য (Artificial Sun)। যার উষ্ণতা ৫ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

ইতিহাসের পাতা ধরে পিছিয়ে যাওয়া যাক কয়েক বছর। আজ থেকে প্রায় ছ’দশক আগের কথা। সোভিয়েতের গবেষকরা প্রথমবার সফলভাবে নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে পারমাণবিক বিক্রিয়াই শক্তি সরবরাহ করে সূর্যকে। তবে সোভিয়েত গবেষকদের উদ্দেশ্য শক্তি উৎপাদন ছিল না, বরং তা ছিল যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ। পরবর্তীতে ৬০ বছর ধরে একাধিক বদল এসেছে এই প্রযুক্তিতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিউক্লিয় ফিউশনকে বাণিজ্যিকরণ করতে মরিয়া লড়াই শুরু হয়েছে বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা। 

তাদের মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ সংস্থা টোকামার্ক এনার্জি। এবার তাদের দৌলতেই তৈরি হল বিশ্বের অন্যতম ফিউশন আর্ক রিঅ্যাকটর। সম্প্রতি বদ্ধ প্রকোষ্ঠে হাইড্রোজেন গ্যাসের মধ্যে দিয়ে ১ লক্ষ ৪০ হাজার অ্যাম্পিয়র বিদ্যুৎ চালনার করে কৃত্রিম সূর্য তৈরি করে ব্রিটিশ সংস্থাটি। যার উষ্ণতা পৌঁছায় ৫ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পারতপক্ষে যা সূর্যের থেকেও বেশি।

আগামীদিনে এই নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয় সংযোজন শক্তিকে কাজে লাগিয়েই শক্তি উৎপাদনের কথা চিন্তা করছেন গবেষকরা। তা যেমন সাশ্রয়ী হবে, তেমনই হবে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় বর্জ্যমুক্ত শক্তির উৎস। এখনও পর্যন্ত এই রিঅ্যাকটরের বিক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজন পড়ে বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি। সেই শক্তির চাহিদা কমিয়ে এনে, উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করাই এখন পাখির চোখ বিজ্ঞানীদের কাছে…

Powered by Froala Editor