প্রায় ভেঙে পড়া শতাব্দীপ্রাচীন গাছ কাটা পড়বে, গাছ-পাখি-কীটপতঙ্গ-সহ সবাইকে শেষ বিদায় বৌদ্ধ মঠের

ডুমুর গাছের তলায় দীর্ঘ ৪৯ দিন ধ্যান করার পর সিদ্ধার্থ বোধিলাভ করেছিলেন। তারপর তিনি হয়ে ওঠেন গৌতম বুদ্ধ। প্রবর্তন করেন বৌদ্ধ ধর্মের। মূলত শান্তির বার্তা বহনকারী এই ধর্ম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বৃক্ষের আশ্রয়ে সিদ্ধার্থ বোধিলাভ করেছিলেন, সেই ধর্মের মানুষেরা গাছকে ভালোবাসবেন না তা কি হয়! সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে রাস্তার ধারে বেড়ে ওঠা একটি গাছকে বিদায় জানানোর ঘটনায় যেন বৌদ্ধধর্মের বৃক্ষপ্রেমের দিকটাই উঠে এল।

একশো বছর বয়সি ফার গাছটির পাশে গড়ে উঠেছিল একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি। আর সেটি কাটা পড়ার খবর জানতেই বৌদ্ধ মঠের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গাছটিকে বিদায় জানানো হয়েছে। গাছটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন সেখানকার সন্ন্যাসীরা। কিন্তু গাছটির বোধহয় এত ভালোবাসা সহ্য হয়নি। বার্দ্ধক্যে পৌঁছাতেই মানুষের যেমন মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, গাছটির ক্ষেত্রেও তার বিকল্প হবে না।

বিদায় সম্ভাষণে গাছটিতে বসবাসকারী সমস্ত পাখি, কীটপতঙ্গদেরকেও উল্লেখ করে ট্রিবিউট দেওয়া হয়েছে। একটি গাছের মৃত্যুর সঙ্গে যে তাকে জড়িয়ে থাকা সমস্তকিছুই হারিয়ে যায়, তা বোঝে ক’জন!

স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে আসছিল গাছটির শরীর, ডালপালার ভার যেন বইতে পারছিল না সে। যে-কোনো সময় ডালপালা সমেত ভেঙে পড়বে, এই মর্মে গাছটিকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মানুষের বিপদের কারণ যে একটি গাছ হয়ে উঠতে পারে, তা ভাবতে পারেননি অনেকেই। ফার গাছটির ছায়া যেন কোনো অংশে সেই ডুমুর গাছটির ছায়ার থেকে কম ছিল না। কত পাখির আশ্রয় একটি গাছ, অথচ বাসস্থান না থাকলে কোথায় পালাবে তারা! গাছের পাশাপাশি তাদের জীবনকেও যেন বেশ কিছুটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া।

গাছটিকে শ্রদ্ধা জানাতে বেশ কিছু প্রতিবেশী গত রবিবার জড়ো হন। গাছটির সঙ্গে এ যেন শিকড় সংলাপ। আত্মীয়ের মৃত্যুতে যেমন ভেঙে পড়ে মানুষ, আক্ষরিক অর্থে এই কষ্ট তার চেয়ে।কোনো অংশে কম নয়। মৃত্যুর কিনারে এসে মানুষ তার জীবনকে ফেরত চায়, বেঁচে ফিরতে চায় পৃথিবীর দোরগোড়ায়। কিন্তু পারে না, কালের নিয়মেই তাঁকে জীবন ছেড়ে আসতে হয়। গাছটির ক্ষেত্রেও অন্যথা হল না, নীল আকাশকে আরও কিছুটা হাঁ-করা শূন্যতা দিয়ে শহীদ হতে চলেছে সে।