একাধিক মোবাইল কম্পানিকে একসঙ্গে জুড়ে রাখার স্বীকৃতি নোবেলে

সময়টা ৮০-র দশকের শেষদিক। তখন সবে সেলুলার নেটওয়ার্কের ব্যবহার শুরু হতে চলেছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কিন্তু তখনও কোনো কোম্পানির আত্মপ্রকাশ ঘটেনি। তব মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হতে চলেছে এবং খুব তাড়াতাড়ি এটাই যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে সেকথা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু তার জন্য কোম্পানিগুলির মধ্যে নিলামের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। তবে এই নিলাম কীভাবে সম্ভব হবে, সেটাই ভাবছিলেন পল মিলগ্রম। আর সেই ভাবনাই যে শেষ পর্যন্ত এই নতুন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হয়ে দাঁরাবে, সেটা হয়তো তখন আন্দাজ করা যায়নি।

এবছর অর্থনীতির নোবেল প্রাপক হিসাবে যৌথভাবে উঠে এল পল মিলগ্রম এবং রবার্ট উইলসনের নাম। ‘অকশন থিওরি’ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য পেলেন নোবেল পুরস্কার। কিন্তু কী আছে এই গবেষণায়? আসলে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং নবতম একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রকে টিকিয়ে রেখেছে তাঁদের গবেষণাই। একাধিক আইনি জটিলতার মধ্যেও অসংখ্য মোবাইল কোম্পানি ঠিকঠাক কাজ করে যেতে পারছেন তাঁদের জন্যই। নাহলে হয়তো বেতার যোগাযোগ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছতেই পারত না। জেনে নেওয়া যাক সেই আবিষ্কারের ইতিহাসই।

১৯৯৩ সালে আমেরিকার মোবাইল কোম্পানিগুলির মধ্যে সেলুলার স্পেকট্রাম লাইসেন্স নিলামের জন্য ফেডারাল কমিউনিকেশন কমিশন নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন। সেই প্রথম নিলাম। এর আগে এমন অভিজ্ঞতা নেই। সবাই মনে করেছিলেন, এই নিলাম থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যত রূপরেখা তৈরি হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তার কিছুই হল না। সব মিলিয়ে সেই প্রথম নিলাম রীতিমতো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করল। এফসিসি-র সদস্য ইভান কিউয়েরেল তখন পল মিলগ্রমের কাছে গেলেন। মিলগ্রম যে এই বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন, সেকথা তিনি আগেই জানতেন।

১৯৮৩ সাল থেকেই মিলগ্রম বলে আসছিলেন সেলুলার স্পেকট্রামের নিলাম হোক ক্লোজড বিড, অর্থাৎ খামবন্দি নিলামের মাধ্যমে। কিন্তু শুধু এটুকুতেই সমস্যার সমাধান হওয়ার কথা নয়। বাস্তবেও তা হয়নি। মিলগ্রম আবারও গবেষণায় বুঁদ হয়ে গেলেন। মাঝেমাঝে সাহায্য করেছেন ইভান কিউয়েরেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন আবারও এগিয়ে এলেন মিলগ্রমের প্রথম দিকের সমস্ত গবেষণার পর্যবেক্ষক রবার্ট বব উইলসন।

আসলে আমরা মোবাইল এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রমশ ব্যবহার করে চলেছি বেতারমণ্ডলের খুব সামান্য অংশ। কিন্তু এই সামান্য অংশ ব্যবহারের জন্যও উপযুক্ত বণ্টন দরকার। নাহলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। ঠিক যেমন ক্রস-কানেকশনের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। তবে এখন আর এই সমস্যা হয় না বললেই চলে। আর এই না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ মিলগ্রম এবং উইলসনের গবেষণায় সাফল্য। প্রাথমিক অবস্থাতেই তাঁরা যে রাস্তা দেখিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে ২জি থেকে ৫জি পর্যন্ত সমস্ত স্পেকট্রামের নিলামেই সেই একই তত্ত্ব পথ দেখিয়েছে। এমনকি জাতীয় স্তরে নিলামের পাশাপাশি আঞ্চলিক বন্টনের উপযুক্ত মডেলও দিয়েছেন তাঁরা। যে ‘অকশন থিওরি’ একসময় প্রায় অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেক অর্থনীতিবিদ, তাই এখন ন্টিকিয়ে রেখেছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রকে। নোবেল পুরস্কার সেই কাজকেই স্বীকৃতি দিল এবার। 

তথ্যসূত্রঃ Putting Auction Theory to Work, Paul Milgrom

Powered by Froala Editor

More From Author See More