ক্যামেরাবন্দি করেছেন গোটা পৃথিবীকেই, আজও ফুরোয়নি অটেনবোরো-র জাদু

ফসিল, পাথর, প্রাকৃতিক নমুনা সংগ্রহ করা ছিল তাঁর ছোটবেলার অভ্যেস। এমনকি, সংগ্রহশালা ক্রমে এত বড় হয়ে উঠেছিল যে তাঁকে ডাকা হত 'মিউজিয়াম' নামে। তবে এই বালক যে পরবর্তীতে পৃথিবীর সম্পদ হয়ে উঠবেন, তা ভাবতে পারেননি অনেকেই। তিনি আর কেউ নন, বিখ্যাত ন্যাচারাল হিস্টোরিয়ান স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো, যাঁর জন্ম ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের মিডলসেক্স শহরে।

নেভির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছোটদের বিজ্ঞান বই সম্পাদনা করেই জীবন চলত তাঁর। এরপর বিবিসির রেডিও টক প্রডিউসার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন তিনি। ন'মাসের ট্রেনিং সম্পন্ন হবার পর, ১৯৫২ সালে বিবিসিতে একজন ফুলটাইমার হিসেবে যোগ দেন। এরপর বাকি জীবনে তাঁকে আর কখনও ফিরে তাকাতে হয়নি। বিবিসিতে অ্যানিমেল প্যাটার্নের ওপর তিনটি সিরিজ প্রোডিউস করার সময় তিনি পরিচিত হন লন্ডন জু-এর সরীসৃপ বিভাগের পরিদর্শক জ্যাক লেস্টারের সঙ্গে। দুজনে মিলে বানিয়ে ফেলেন প্রাণী সংগ্রহের একটি নতুন সিরিজ, যা 'জু কোয়েস্ট' নামে ১৯৫৪ সালে সম্প্রচারিত হয়।

'জু কোয়েস্ট' থেকে পরবর্তীকালে তিনি প্রোডিউস করেছিলেন 'ট্র্যামভেলার টেলস' ও 'অ্যাডভেঞ্চার' নামের দুটি তথ্যচিত্রের সিরিজ। এরপর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে স্যার ডেভিড লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস-এ স্যোশাল অ্যানথ্রোপলজি পড়তে চলে যান।

পরবর্তী কালে বিবিসিতে পুনরায় যোগদান করার পর তিনি 'লাইফ অন আর্থ' এর স্ক্রিপ্ট লিখতে শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি 'দ্য ট্রাইবাল আই' নামের একটি সিরিজ উপস্থাপিত করেছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যেও 'লাইফ অন আর্থ' তাঁর জীবনের অন্যতম একটি সেরা কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীতে ওয়াইল্ডলাইফ ফিল্ম মেকিং-এর ক্ষেত্রে বহু ডকুমেন্টারিতে ডেভিডের কর্মপদ্ধতিকে অনুসরণ করেছেন অনেকেই। 'লাইফ অন আর্থ' সাফল্য পাওয়ার পাঁচ বছর পর, 'দ্য লিভিং প্ল্যানেট' তথ্যচিত্রটি পর্দায় দেখানো হয়েছিল।

বয়স বাড়লেও থেমে থাকেনি তাঁর কাজ। ১৯৯৩ সালে 'লাইফ ইন ফ্য ফ্রিজার' নামে আন্টার্কটিকার ন্যাচারাল হিস্ট্রির ওপর প্রথম একটি টিভি সিরিজ বানিয়েছিলেন তিনি। 'লাইফ' সিরিজ ছাড়াও তিনি বহু তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। বিবিসিতে সম্প্রচারিত 'ওয়াইল্ডলাইফ অন ওয়ান' এর প্রত্যেকটি এপিসোডের বয়ান লিখেছিলেন তিনি। এই সিরিজটির সাপ্তাহিক দর্শক সংখ্যা এক লাফে বেড়ে দশ মিলিয়ন হয়েছিল।

এরপর, ৯১ বছর বয়সে অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি 'ব্লু প্ল্যানেট টু' উপস্থাপনা করেন। সে-বছর এই সিরিজটি ইউনাইটেড কিংডমের সবচেয়ে বেশি দর্শক লাভ করেছিল। ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সের বিখ্যাত টিভি সিরিজ 'আওয়ার প্ল্যানেট' তাঁর হাতেই করা।

স্যার ডেভিড অটেনবোরোই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট যুগ থেকে হালের ফোর-কে প্রত্যেকটি স্ক্রিনে কাজ করে 'বাফটা' পুরস্কার লাভ করেছেন। সমকালীন সময়ের ‘দ্য গ্রেটেস্ট ব্রডকাস্টার’ বলে ডাকা হয় তাঁকে। ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি থেকে পেয়েছেন ৩২টি সাম্মানিক ডিগ্রি, যা এই মূহূর্তে বিশ্বে বাকিদের কাছে অধরা।

যে মানুষ এত বছর ধরে প্রকৃতি নিয়ে এত পুরস্কার প্রাপ্ত তথ্যচিত্র বানিয়ে গেছেন, তাঁকে নিয়ে একটাও তথ্যচিত্র হবে না, তাই কী হয়! বিখ্যাত ওয়াইল্ডলাইফ ফিল্মমেকার সিলভারব্যাক ফিল্মস-এর উদ্যোগে এই মানুষটিকে নিয়েই বানানো হচ্ছে 'আ লাইফ অন আওয়ার প্ল্যানেট'। যার ক্যামেরায় এতদিন ধরা পড়েছে পৃথিবীর নানা অজানা দিক, তাঁকেই এখন কতখানি ক্যামেরাবন্দী করা গেছে, দেখার অপেক্ষা সকলেরই।

More From Author See More

Latest News See More