বিশ্বভারতীর লেটারহেডে নেই বাংলা, রবীন্দ্র সংস্কৃতির পীঠস্থান ঘিরে নয়া বিতর্ক

মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্তোৎসবে কিছু ছেলেমেয়ে তাঁদের জামায়, পিঠে লিখে রেখেছিল কিছু শব্দ। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘বিকৃত’ লাইন। সেই লাইনগুলিই নিজের ভিডিওতে গেয়েছিলেন রোদ্দুর রায়। বাঙালি সমাজ রীতিমতো তেড়েফুঁড়ে ওঠে এই ঘটনায়। এখনও রেশ মিলিয়ে যায়নি। তার মাঝেই আরও একটা ঘটনা নিয়ে বিতর্ক উঠে এল।

আরও পড়ুন
হিন্দিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন বিশ্বভারতীতে, উঠছে বিতর্ক – কতটা যুক্তিযুক্ত?

এবার কাঠগড়ায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি বসন্তোৎসবের বিতর্কের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল ওই প্রতিষ্ঠানের লেটারহেডের একটি ছবি। সেখানে প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, আচার্য, উপাচার্য, রবীন্দ্রনাথের নাম— সবই লেখা আছে। কিন্তু পুরোটাই হিন্দি আর ইংরেজিতে। গোটা লেটারহেডের কোথাও বাংলা ভাষার কোনো ছাপ নেই। যা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

আরও পড়ুন
কেশবচন্দ্র সেন ‘অসামাজিক’, বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য

১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই বিশ্বভারতীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই রবি ঠাকুর, যার কাছে আমরা বাঙালিরা, বাংলা ভাষা নিয়ে বারবার ফিরে যাই। এই প্রতিষ্ঠান তাঁর স্বপ্নের প্রাণকেন্দ্র। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন, সেই সঙ্গে বাংলা-ভারতের সংস্কৃতিকে লালন— শুরুর দিন থেকে এটাই ছিল বিশ্বভারতীর লক্ষ্য। বিশ্ব ও ভারতের মিলন হয়েছিল এই বাংলার বুকে। সেখানেই লেটারহেডে বাংলা অনুপস্থিত! রীতিমতো স্তম্ভিত অনেকে।

আরও পড়ুন
এস্রাজে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষক হিসেবে পেলেন ১৭ বছরের অশেষচন্দ্রকে

এই ঘটনা তুলে আনছে অনেক প্রশ্ন, বিতর্ক। সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর গানকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছিল রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে। তাঁরই ‘বিকৃত’ করা একটি লাইন ছড়িয়ে পড়েছিল রবীন্দ্রভারতীর অনুষ্ঠানে। সেই নিয়ে বঙ্গসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। আজ যখন খোদ রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর লেটারহেডে বাংলার চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে না, তখন এই সমাজ কী বলবে? বাংলা ভাষার স্থান তাহলে আজ কোথায়? আমরা নিজেরা কি মাতৃভাষার গৌরব রাখতে পারছি? প্রশ্ন উঠছে সেখানে। কেউ কেউ অবশ্য এও বলছেন, বিশ্বভারতী বর্তমানে অন্যতম একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে হিন্দি আর ইংরেজিতেই যে লেটারহেড থাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কোথায়? সেই কথা ঠিকই। কিন্তু পাল্টা যুক্তি, যে প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়েছে বাংলা সাহিত্যের এক অতিমানবের হাতে, সেখানে সেই ভাষাটিই সরকারি কাগজে থাকবে না, সেটা আরও আশ্চর্যের নয় কি? খুব সম্প্রতি বিশ্বভারতীতেই হিন্দিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। বাঙালি উপাচার্য নিজেও বক্তৃতা দিয়েছিলেন হিন্দিতে। খোদ রবীন্দ্র আঙিনায় এমন ঘটনাগুলো কি সত্যিই বঙ্গভাষাকে আরও পেছনে ঠেলে দিচ্ছে? আপনাদের মতামত কী?