ঠাঁই হল না কলকাতায়, মৃণাল সেনের শেষ স্মৃতিচিহ্ন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে

‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’, ‘পদাতিক’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘খারিজ’, ‘আকালের সন্ধানে’-র মতো একাধিক বিশ্বমানের সিনেমা বাঙালিকে দিয়ে গেছেন তিনি। মৃণাল সেন। বাংলা চলচ্চিত্রের মূর্ত প্রতীক তিনি। অথচ, এমন এক ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও নিজের কাজগুলি যত্ন করে গুছিয়ে রাখেননি তিনি। শুধুমাত্র আলস্য কিংবা সংরক্ষণে অনীহা থেকেই। স্মৃতিচারণ করতে করতে যেন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন তাঁর পুত্র কুণাল সেন। সম্প্রতি বাবার শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু তিনি সংরক্ষণের জন্য তুলে দিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় সে-কথাই প্রকাশ করলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকায় বসবাসরত কুণাল। ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, সংরক্ষণের এই প্রস্তাবটি প্রথম এসেছিল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেই। তিনি নিজেও সেখানে গিয়ে দেখে আসেন তাঁদের সংরক্ষণাগার এবং ব্যবস্থাপনা। আর তাঁর পরেই এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বাংলা চলচ্চিত্রের এমন এক ব্যক্তিত্বের নথিসংরক্ষণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।

আবেগতাড়িত কুণাল উল্লেখ করেন, জীবদ্দশায় নিজের সমস্ত সৃষ্টিই ফেলে দিয়েছিলেন মৃণাল সেন। সামান্য কয়েকটি পুরস্কার, বাবার লেখা চিঠি, চিত্রনাট্যের খসড়া— সর্বসাকুল্যে এটুকুই গচ্ছিত ছিল তাঁর কাছে। তবে তাঁরও বয়স বাড়ছে। এসব দুর্মূল্য সম্পদ তিনিই বা আগলে রাখবেন আর কতদিন? কুণাল সেন লেখেন, মাত্র তিনটি বাক্সের মধ্যেই ধরে যায় বাবার স্মৃতিচিহ্নের অবশিষ্টাংশ। হ্যাঁ, তিনটি মাত্র বাক্স। শুনলেও আশ্চর্য লাগে বৈকি।

আরও পড়ুন
ভারত-চিন যুদ্ধ, সেন্সর বোর্ডের কোপে মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’

তবে বিশ্ববরেণ্য বাঙালি পরিচালকের চিহ্ন বাংলায় থাকবে না— এমন প্রসঙ্গ তুলেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। সে আক্ষেপের সুর প্রতিফলিত হয়েছে কুণাল সেনের কণ্ঠেও। এরপর থেকে তাঁকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মহাফেজখানায় বসে বাবার স্মৃতি ছুঁয়ে দেখতে হবে, সেটা যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না তিনিও। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এমন এক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে কি ন্যূনতম উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য প্রশাসন? বোধ হয় না। সেদিক থেকে খানিকটা হলেও হয়তো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগে যোগ্য সম্মানটুকু পেলেন কালজয়ী…

আরও পড়ুন
মৃণাল সেনের ‘কোরাস’, এক আধুনিক ফ্যান্টাসির সন্ধানে

ছবি ঋণ কুণাল সেনের ফেসবুক প্রোফাইল

Powered by Froala Editor