মানুষের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করবে কৃত্রিম শব্দ ও গন্ধ, অবাক করা আবিষ্কার এমআইটির

স্বপ্নচুরির কথা বিজ্ঞানীরা আগেই বলেছিলেন। কিন্তু মানুষের মনের ভিতর ঢুকে সেই স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করাও কি সম্ভব? ভাবতেই কেমন অবাক লাগে, তাই না? অথচ এমনটাই সম্ভব করে দেখলেন ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা। চেতন আর অবচেতন জগতের মধ্যে তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন শব্দ আর গন্ধের একটি কৃত্রিম পর্দা। আর এর ফলেই যন্ত্রের ইচ্ছা মতো স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যাবে মানুষ। যন্ত্রের ইচ্ছে মানে মানুষেরই ইচ্ছে। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারেন কোনো রোগীর ডাক্তার, অথবা সেই মানুষটি নিজেও। আর এভাবেই স্বপ্নের জগতে 'ইনসেপশন' ঘটতে চলেছে এমআইটির ড্রিম ল্যাবরেটরিতে।

মানুষ জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। আপাত দৃষ্টিতে এই সময়টার কোনো ব্যবহারিক মূল্য না থাকলেও, এই ঘুমের সময়টাই ঠিক করে দেয় জেগে ওঠার পর আমরা কী করবো। আর তার মূল চাবিটি হল স্বপ্ন। প্রবল মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে কেউ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখলেন। সেই স্বপ্নের রেশ কিন্তু থেকে যায় জেগে ওঠার পরেও। শরীরে ক্লান্তি আর অবসাদ গ্রাস করে রাখে সারাদিন। আবার কোনো সুন্দর স্বপ্ন দেখলে সমস্ত ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে শিথিল হয়ে ওঠে আমাদের পেশি। ফলে আগামী দিনটিও থাকে কর্মচঞ্চল। অথচ এই সবকিছুর উপরেও যে মানুষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়, এমনটা এতদিন কল্পনাই করেছে মানুষ। সেই কল্পনাও পরিণত হল বাস্তবে।

এমআইটির ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী টেসা লাভ তৈরি করেছেন দুটি গম্বুজের আকৃতির ডোর্মিয়ন। তার একটিতে আছে নানারকম অডিও ক্লিপিং। অন্যটিতে কৃত্রিম সুগন্ধ। এই গম্বুজের ভিতর নির্দিষ্ট বিছানায় শুয়ে পড়লে কৃত্রিম প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁকে ধীরে ধীরে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হবে। আর ক্রমশ সেই মানুষটি চেতন আর অবচেতন জগতের মধ্যবর্তী হিপ্নোগগনিয়া স্তরে পৌঁছে গেলেই তাঁর উপর প্রয়োগ করা হবে অডিও ক্লিপিং বা কৃত্রিম সুগন্ধ। আর এর ফলেই ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ার পরেও সেই প্রভাব থেকে যাবে ঘুমন্ত মানুষটির মস্তিষ্কে। সে স্বপ্ন দেখতে থাকবে পরিকল্পনা মতোই।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এই যন্ত্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত হলেও এখনই এর ব্যবহার শুরু করা যাবে না বলে জানিয়েছেন টেসা। এমন গবেষণার প্রযুক্তিগত মূল্য যেমন আছে, তেমনই নৈতিক দিকটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এভাবে যেমন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব, তেমনই সুস্থ মানুষকে চিরকালের জন্য উন্মাদ করে তোলাও কঠিন নয়। তাছাড়া ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ বাধা পাওয়ার ফলে অনিদ্রার মতো কোনো রোগ জন্ম নিচ্ছে কিনা, সেই বিষয়েও গবেষণা প্রয়োজন। তবে তার পরেও একথা স্বীকার করতেই হবে, মানুষের স্বপ্ন যদি হাতের মুঠোয় এসে যায় তাহলে সমাজের বুক থেকে অনেক ক্লান্তি, অবসাদ মুছে যাবে। আরও বেশি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে এই পৃথিবী।