আবিষ্কৃত হল নতুন গোত্রের ঝড়, দেখা যায় ভারত মহাসাগরেই

সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছে ঝড়। আমফান, ফণী, ইয়াস, নিসর্গ কিংবা গুলাব— একাধিক ঘূর্ণিঝড় তছনছ করে দিয়েছে ভারতীয় উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিকে। তবে শুধু সাইক্লোন নয়। সাইক্লোন ছাড়াও স্নো স্টর্ম, হেইল স্টর্ম, থান্ডারস্টর্ম, টর্নেডো-সহ প্রায় ১০ ধরনের ঝড়ের দেখা মেলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। তবে এতদিন পর্যন্ত মানবচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গিয়েছিল আরও এক ধরনের ঝড় (Storm)। দীর্ঘ পাঁচ বছরের আবহাওয়ার রিপোর্ট বিশ্লেষণের পর এই নতুন গোত্রের ঝড় আবিষ্কার করলেন আবহাওয়া-বিজ্ঞানীরা।

‘অ্যাটমোস্ফিরিক লেক’ বা ‘বায়ুমণ্ডলীয় হ্রদ’ (Atmospheric Lake)। হ্যাঁ, গবেষকরা এমনটাই নামকরণ করেছেন এই নতুন ঝড়ের। তবে নামের মধ্যে ‘হ্রদ’ থাকলেও পারতপক্ষে হ্রদের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক নেই এই ঝড়ের। বরং, তার দেখা মেলে মহাসাগরেই। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে ভারত মহাসাগরের বিষুব অঞ্চলে। বিষুবরেখার উত্তর ও দক্ষিণের ১০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যেই তৈরি হয় এই বিশেষ গোত্রের ঝড়। 

সাধারণত, বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা এবং জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব অত্যন্ত বেড়ে গেলে তৈরি হয় এই ধরনের ঝড়। বায়ুমণ্ডলের মধ্যে অনেকটা ভাসমান লেক বা হ্রদের মতোই ঘুরে বেড়ায় এই জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ুস্তর। আর সেই কারণেই এই ঝড়ের এহেন নামকরণ। তবে অন্যান্য ঝড়ের মতো বিধ্বংসী নয় ‘বায়ুমণ্ডলীয় হ্রদ’। বরং, তা পৃথিবীর বুকে বিরাজমান ধীরতম ঝড়। আর অত্যন্ত ধীর গতিসম্পন্ন হওয়ার জন্য এই ঝড়ের স্থায়িত্বও অনেক বেশি। বিগত ৫ বছরের মেটিওরোলজিক্যাল তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে দীর্ঘতম ‘বায়ুমণ্ডলীয় হ্রদ’ স্থায়ী হয়েছিল ২৭ দিন। তাছাড়াও এই ঝড়ের গড় স্থায়িত্ব প্রায় ৬ দিনের কাছাকাছি। 

এই ঝড় যে বিধ্বংসী নয়, তা বলা হয়েছে আগেই। তবে বিপুল জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ও উচ্চ ঘনত্বের জন্য এই ঝড়ের প্রভাবে বেশ ভালো মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তৈরি হওয়ার পর এই ঝড় ধীর গতিতে প্রবাহিত হয় আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপকূলবর্তী অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই থেমে যায় ‘বায়ুমণ্ডলীয় হ্রদ’। আবার কোনো কোনো সময়ে তা আফ্রিকার রুক্ষ প্রান্তরকে সতেজও করে তোলে।

সম্প্রতি, আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপনা করা হয় এই নতুন গোত্রের ঝড়ের কথা। এই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা আবহাওয়াবিদ ব্রায়ান ম্যাপেস। তবে এই ঝড়ের সম্পূর্ণ চরিত্র নির্ধারণের জন্য আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন ব্রায়ান…

Powered by Froala Editor

More From Author See More