সমপ্রেমী, ‘দেশদ্রোহী’, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব মেগানই এখন বিশ্বসেরা ফুটবলার : একটি অন্য রূপকথা

ঝুলিতে দুটো বিশ্বকাপ। অলিম্পিক স্বর্ণপদক। এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট। ছ’-ছ’খানা গোল। ফাইনালে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনবদ্য পারফরম্যান্স। নিজের টিমকে বিশ্বসেরার লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া। এবং গতকাল ২০১৯ ব্যালন-ডি-অঁর বিজয়ী হয়েছেন তিনিই। অথচ তাঁর কথা ফ্রন্ট পেজ ছাপবে না। রোনাল্ডো-মেসি-ভার্জিল ভ্যান ডাইকদের নিয়ে তর্জায় মেতে থাকবেন ফুটবলপ্রেমীরা। মেগান র‍্যাপিনোকে ভুলে যাব আমরা সবাই।

ছোট্টবেলায় নিজের ভাইকে বারবার দেখেছেন গারদের মধ্যে। সেই অন্ধকার জগতের হাতছানি এড়াতেই জড়িয়ে ধরেছিলেন সাদাকালো ফুটবল। তাঁর জীবনের পেছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি। নিজের দেশ, যুক্তরাষ্ট্রে নিজেকে প্রমাণ করেই, বিশ্বের দরবারে তিনিই বিশ্বসেরা মহিলা ফুটবল অধিনায়কদের একজন।

কিন্তু লড়াইটা সহজ ছিল না। মাঠের মতো বাস্তব জীবনেও ধেয়ে এসেছে একের পর এক কড়া ট্যাকল। বিতর্কও পিছু ছাড়েনি তাঁর। লড়াইটা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। ২০১২ সালে নিজেকে একজন সমপ্রেমী মানুষ হিসেবে ঘোষণা করতেই ধেয়ে এসেছে নিন্দার ঝড়। তাতে অবশ্য টলে যাননি মেগান। দাঁতে দাঁত চিপে লড়ে যাওয়াই তাঁর স্বভাব। তাই এরপরেও তিনি ছেলে ও মেয়ে ফুটবলারদের সম-বেতনের দাবি তোলেন। ফের তোলপাড় পড়ে যায় ফুটবল-দুনিয়ায়।

“আমরা, মেয়েরা দুটি বিশ্বকাপ জিতেছি, আর ছেলেরা তো কোয়ার্টার অবধিই পৌঁছতে পারে না।” মেগানের কথা আপোষহীন, তাঁর জোরালো শটের মতো তীক্ষ্ণ ও সোজা।

যথারীতি পিতৃতন্ত্রের প্রতিভূরা নেমে পড়েন মাঠে। যুক্তি সাজাতে থাকেন তাঁর বিরুদ্ধে। তার উপর ‘কলিন ক্যাপার্নিক’ বির্তকে মেগান দাঁড়িয়েছিলেন কালো মানুষদের পাশে। জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় বসেছিলেন হাঁটু গেড়ে। ব্যাস, মিডিয়ার কাছে রাতারাতি হয়ে পড়লেন দেশদ্রোহী। সোশাল মিডিয়াতেও ট্রোল শুরু হয় - “মেয়েটা তো খেলে ভালোই, কিন্ত সব বিষয়ে কটর কটর মন্তব্য করে কেন?” প্রথম বিশ্ব হোক বা ভারতবর্ষের মতো ‘উন্নয়নশীল’ তৃতীয় বিশ্বের দেশ, রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করলেই ‘দেশদ্রোহী’ তকমা জোটা স্বাভাবিক। তার ওপর, সেই প্রশ্ন যদি করেন একজন মেয়ে! আরও স্পষ্ট করে বললে একজন ‘সমপ্রেমী’ মেয়ে!

মেগান কখনই ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ হতে চাননি। চানও না। সমস্ত কুৎসাকে তিনি একটি নিপুণ লাথি মেরে পাঠান তেকাঠির মাঝে। মাঠে তাঁর করা প্রতিটি গোল, প্রতি অ্যাসিস্ট আসলে পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক-একটি প্রতিবাদ।

এবারের ব্যালন-ডি-অঁর তাই রোনাল্ডো-মেসিকেও ছাপিয়ে আসলে মেগানের। হাজার হাজার মেগানদের।