মোঘলদের পর, এনসিইআরটি-র পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়লেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ

১৯৪৬ সাল। ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ঘোষণা করেছিল ব্রিটিশরা। অথচ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও, দেশ শাসনের জন্য কোনো ভারতে নির্দিষ্ট সংবিধান ছিল না তখনও। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র-পরিচালনার নিয়মনীতি লিপিবদ্ধ করতেই তাই তৈরি করা হয়েছিল একটি বিশেষ কমিটি— কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বা সংবিধান সভা। যার অন্যতম সদস্য ছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। সংবিধান সভার (Constituent Assembly) বৈঠকে জওহরলাল নেহরু, বিআর আম্বেদকর, বল্লভভাই প্যাটেলের মতোই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আবুল কালাম আজাদ। এবার তাঁর নামই বাদ পড়ল রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে। 

গান্ধীহত্যা, মুঘল অধ্যায়ের পর এবার ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং অর্থাৎ এনসিইআরটির বই থেকে বাদ পড়ল স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের (Maulana Abul Kalam Azad) নাম। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে এনসিইআরটির একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকের সংশোধিত মুদ্রণ। আর সেখানেই এই বদল। এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে এতদিন উপস্থাপিত হত ‘কনস্টিটিউশন— হোয়াই অ্যান্ড হাউ’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদন। উল্লিখিত থাকত কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি অর্থাৎ সংবিধান সভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের নাম। সেখানে নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, আম্বেদকর-সহ অন্যান্যদের নাম রাখা হলেও, বাদ দেওয়া হয়েছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে। 

তবে শুধু আবুল কালাম আজাদই নন, বাদ পড়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসও। ভারতভুক্তির সময় মহারাজা হরি সিংহের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি চুক্তিটিকেও মুছে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই-এর দশম অধ্যায়, ‘ফিলোজফি অফ দ্য কনস্টিটিউশন’ থেকে। সংশোধিত হওয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর ইতিহাসকে মুছে ফেলতেই এই উদ্যোগ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট বিষয় দুটি বই থেকে বাদ পড়লেও, এনসিইআরটির পাবলিক ডোমেইনে এখনও পর্যন্ত সে-ব্যাপারে কোনো তথ্য উল্লিখিত হয়নি। জানানো হয়নি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি বাদ দেওয়ার কারণও। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা স্তরে। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক অভিসন্ধির জেরে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ তুলছেন ঐতিহাসিকদের একাংশ। ২০০৯ সালে চালু হওয়া আবুল কালাম আজাদ বৃত্তি বন্ধের সঙ্গেও এই ঘটনার ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে বলেও দাবি তাঁদের। 

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে এনসিআরটির সিলেবাস বদল নিয়ে। সেই চাপানউতরেই যেন ঘৃতাহুতি দিল এই নতুন পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিকল্পিত ইতিহাস বিকৃতির শেষ কোথায়? জানা নেই উত্তর… 

Powered by Froala Editor