বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য লড়াই কাশ্মীরের গণিতবিদের

খাঁচার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুটি ভাল্লুক শাবক। তাদের সঙ্গেই অনায়াসে খেলা করছেন এক মধ্য বয়স্ক মহিলা। হাতে ধরা ফিডিং বটল। কখনও নিজের কোলে তুলে নিয়ে সন্তানস্নেহে ভাল্লুকদের দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনি। 

আলিয়া মির (Aliya Mir)। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে তিনি গণিতবিদ। তবে পেশায় তিনি কাশ্মীর ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এর (Wildlife SOS) প্রোজেক্ট ম্যানেজার। রাজ্যজুড়ে বন্যপ্রাণীদের রক্ষার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই। কিন্তু নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্র ছেড়ে হঠাৎ এমন ভিন্ন পথ বেছে নিলেন কেন তিনি? 

ছোটো থেকেই কুকুর বেড়ালের প্রতি ভালোবাসা ছিল আলিয়ার। কলেজে পড়ার সময় থেকেই নিজের বাড়িতে উদ্ধার করে আনতেন রাস্তার কুকুর কিংবা বেড়াল শাবকদের। শ্রীনগর কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক হওয়ার পর কাশ্মীরের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোও শুরু করেছিলেন আলিয়া। সেই সময়ই তাঁর নজর কাড়ে বন্যপ্রাণীদের দুর্দশার ছবি। আলিয়া বুঝতে পারেন, ক্রমাগত উন্নয়ন এবং নগরায়নের দাপটেই বাসস্থান হারাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। আর সেই কারণেই মানুষের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছে চিতাবাঘ, ভাল্লুক কিংবা তুষার চিতার। তাতে শুধু বন্যপ্রাণীরাই নয়, বিপদগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। 

২০০৭ সালের কথা। স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর ওয়াইল্ডলিয়াফ এসওএস-এ স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগদান করেন আলিয়া। বন্যপ্রাণীদের চরিত্র, তাদের উদ্ধার-পদ্ধতি থেকে শুরু করে চিকিৎসা— সবকিছুরই প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এর বছর খানেক পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের চাকরি ছেড়ে বেছে নেন অ্যানিমাল রেসকিউয়ারের জীবনকে। 

এখনও পর্যন্ত কয়েকশো পাখিকে উদ্ধার করেছেন আলিয়া। তালিকায় রয়েছে চিতাবাঘ, স্নো-লেপার্ড, ভাল্লুক, বিষধর সাপও। বছর খানেক আগে শ্রীনগর থেকে দুটি ভাল্লুক শাবক উদ্ধার করেছিলেন আলিয়া। বনদপ্তরের ধারণা, চোরাশিকারিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে তাদের মা। তবে আক্ষরিক অর্থে মায়ের অভাব হয়নি তাদের। বরং, আলিয়াই সেই জায়গা পূরণ করে দিয়েছেন। তাছাড়া কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহর বাসভবন থেকে বিষাক্ত সাপ উদ্ধার করে রীতিমতো সাড়াও ফেলে দিয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সি গণিতবিদ। 

তবে প্রোজেক্ট ম্যানেজার হলেও পাঁচজনের মতো ঘরে বসে কাজ করতে নারাজ তিনি। সারাদিন কাশ্মীরের জঙ্গল, হ্রদ এবং কৃষিক্ষেত্রে ঘুরে বেড়ান তিনি। অনেকক্ষেত্রেই বিষধর সাপ কিংবা চিতাবাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়লে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটে। আলিয়ার লক্ষ্য, মানুষের সঙ্গে বন্যদের এই সংঘাত কমিয়ে আনা। তাছাড়া অবসর পেলে সময় কাটান উদ্ধার করা প্রাণীদের সঙ্গে। ভারতে বন্যপ্রাণী উদ্ধারকর্মীর পেশায় মহিলাদের দেখা যায় না বললেই চলে। তবে সেই ট্যাবু ভেঙে আলিয়া হয়ে উঠেছেন কাশ্মীরের প্রথম মহিলা ‘ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউয়ার’…

Powered by Froala Editor